কিশোরগঞ্জে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছ ও পুরাতন বেঞ্চ বিক্রির টাকা আত্মসাৎ এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্টের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুরে ৫৩ নম্বর খাশালা গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কবির হোসেনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত এ অভিযোগ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন।
তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন কবির হোসেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, কবির হোসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকার সময় তৎকালীন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান বকুলের সঙ্গে যোগসাজশে স্কুল প্রাঙ্গণের ১৭টি গাছ কেটে বিক্রি করেন।
এসব গাছের আনুমানিক বাজার মূল্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ওই টাকার হিসাব বিদ্যালয়ের রেজুলেশন খাতায় উল্লেখ না করে তা আত্মসাৎ করা হয়।
আরও বলা হয়, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার পরও তাকে না জানিয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতির সঙ্গে যোগসাজশে কেজি দরে স্কুলের পুরাতন বেঞ্চ বিক্রি করেছেন কবির।
স্থানীয় ভাঙারি ব্যবসায়ী বিচন আলীর কাছে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিদ্যালয়ের ৫০০ কেজি বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করেন। সেই হিসেবে দাম পেয়েছেন ২২ হাজার ৫০০ টাকা। এটিও রেজুলেশন খাতায় উল্লেখ করা হয়নি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্টের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে শিক্ষক কবিরের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, বিদ্যালয়ের ৫২৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৩০ টাকা করে মোট ৬৮ হাজার ২৫০ টাকা তোলেন কবির। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে সেই টাকা ফেরত দেয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। অ্যাসাইনমেন্টের জন্য আমার ছেলেসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৩০ টাকা করে নেয়া হয়েছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে এলাকার লোকেরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি করলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে টাকা ফেরত দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।’
ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য আরিফুল হক মুরাদ নিউজবাংলাকে জানান, নতুন স্কুল পরিচালনা কমিটিতে অভিভাবক সদস্য হয়েছেন তিনি। কিছু দিন আগে স্কুলের রেজুলেশন বই চেক করেন তিনি। তখন দেখতে পান গাছ বিক্রির কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদোত্তর দেননি কবির হোসেন।
বিভিন্ন সভায় এ নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা উঠলেও গাছ বিক্রির বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি।
পিরিজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্টের নামে টাকা নেয়ার বিষয়টি অন্যদের মুখ থেকে শুনেছি। আমার ছেলেও এ স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয়নি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বকুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। স্কুলের বাউন্ডারি করা হয়েছে দুই বছর আগে। এর আগে স্কুল প্রাঙ্গণে এতগুলো গাছ ছিল কি না বিষয়টি উনি প্রমাণ করুক, এ ঘটনায় আমিও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’
স্কুল পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গাছ কেটে বিক্রি করার যে অভিযোগ সেটি আমার সময়ে নয়। তাই এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। তবে আমি সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরে স্কুলের পুরাতন বেঞ্চ বিক্রি করার যে অভিযোগ সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। যিনি অভিযোগটি করেছেন তিনি অন্য কারও প্ররোচনায় এমনটি করেছেন।’
তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্টের নামে টাকা আদায়ের ব্যাপারটি স্বীকার করেছেন তিনি। আলমগীর বলেন, ‘গত ১ মাস আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছিল। পরে সেগুলো আবার ফেরত দেয়া হয়েছে।’
বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোরশেদা খাতুন নিউজবাংলাকে জানান, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।