বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেশের একটি বলে মনে করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।
বিনিয়োগ আকর্ষণে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় তিন দিনের রোড শোর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য উত্তম জায়গা বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়া যায়।
‘গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় উন্নয়ন হয়েছে। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিটি সূচকে প্রতিবেশীদের এবং প্রতিযোগীদের চেয়ে এগিয়ে আমরা।’
অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক সক্ষমতার প্রমাণ দেয় উল্লেখ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশের মানবসম্পদ। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের যথেষ্ট শ্রমশক্তি রয়েছে। এই শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার।
‘দ্বিতীয়ত, আমাদের অর্থনৈতিক অবকাঠামো অত্যন্ত শক্তিশালী। যেসব পণ্য উৎপাদন করবেন বাংলাদেশে তার বড় একটি বাজার রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন করে চীন ও ভারতের মতো দেশে রপ্তানি করা যায়।’
বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি এও বলেন, ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে উচ্চ রিটার্ন পাওয়া যায়।’
অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তা পাঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গ্যাব্রিজেসুস। প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা, পুঁজিবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরতেই এ আয়োজন করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির বিবেচনায় ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী এই দেশটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি ও অনিবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণ এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন; সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার’।
অনুষ্ঠানে সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন ৬৫ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন সুইজারল্যান্ডের মার্কুজ স্কিলটার, সিলভান স্টিটলার, এলেক্জান্ডার ক্লিংকম্যান, বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স ডিভিশনের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য আলমগীর হোসেন এবং বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বেসরকারি খাতকে সহযোগিতা করছে সরকার। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে ভারসাম্য রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, প্রবাসী আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অত্যন্ত উচ্চ।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এখানে শ্রমশক্তি বিশাল। এই শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে আমরা গবেষণায় জোর দিয়েছি।
‘আমাদের উৎপাদন বাড়ছে। ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। চীন-ভারত-থাইল্যান্ডের মতো দেশে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স ডিভিশনের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার কারণে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের অগ্রগতিকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত, গণতন্ত্রের আগে; দ্বিতীয়ত, অস্থিতিশীল গণতন্ত্র এবং সবশেষে পলিসির ধারাবাহিকতা। আমরা দেখেছি পলিসি যখন ধারাবাহিক ছিল, তখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল।’
তুলনামূলক চিত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৫ সালে আমাদের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ, যা বর্তমানে ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। অতি দারিদ্র্যের হার ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। মানুষের গড় আয়ু ৬৭ থেকে ৭২ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪৯ থেকে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে। শিশুমৃত্যুর হার ৫০ থেকে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে।
‘শিক্ষার হার, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সূচকের উন্নতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ। এসব বিবেচনায় আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন।’
বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রতিবেশী এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পর আমরাই বিশ্বে দ্বিতীয়। …আমাদের রেমিট্যান্স ২৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ইতিবাচক। মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল।
‘আমাদের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের ১৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। এর ৯৫ ভাগই তৈরি পোশাক।’
অনুষ্ঠানে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ন কুমার ঘোষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন, বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোহাম্মদ নকিব উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক সাদ ওমর ফাহিম, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।