বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৮ জেলার ভরসা ৩ ডুবুরি

  •    
  • ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৮:১৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব মনিরুজ্জামান মনির বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো জেলা, সেখানে চারটি বড় নদী আছে, আছে অসংখ্য পুকুর-খাল, তারপরও সেখানে ডুবুরি দল না থাকা হতাশার। জেলা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক ছাবের আলী প্রামাণিক জানান, সেখানে কোনো ডুবুরির পদই নেই।

ডুবুরিসংকটে ভুগছে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলো। বিভাগের আট জেলার মধ্যে শুধু রাজশাহী স্টেশনেই রয়েছে ডুবুরি দল। সেটাও আবার চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য।

বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রায়ই ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। অথচ মাত্র তিনজন ডুবুরি দিয়েই চলছে পুরো আট জেলার কাজ।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, কখনো কখনো একটি অভিযান চালানোর সময় আরেক জায়গায় ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়, তখন পরিস্থিতি সামলাতে খুবই বেকায়দায় পড়তে হয়। আবার ঘটনাস্থলে যেতেও অনেকটা সময় লেগে যায়।

ফায়ার সার্ভিস বিভাগের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় গত আট মাসে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) ১৭টি ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয় একজন।

ডুবে মারা যাওয়ার বেশির ভাগ ঘটনায় ঘটে বর্ষাকালে। অনেক ঘটনার তথ্য ফায়ার সার্ভিসের কাছে আসে না। ডুবে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় জীবিত বা লাশ উদ্ধার না হলেই মূলত ফায়ার সার্ভিসকে বলা হয়।

অনেক সময় পুকুরে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। আবার এসব লাশ ভেসেও ওঠে। তবে নদীতে কোনো ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটলে সে ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের ওপরই ভরসা করতে হয়।

গত ২১ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার চরমোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের একটি খালে ডুবে মারা যায় রাশেদুল ইসলাম নামে এক কিশোর। মহানন্দা নদীর পানি বেড়ে ওই এলাকা প্লাবিত হয়। রাশেদুলসহ কয়েক কিশোর সেই পানিতেই গোসল করছিলেন।

রাশেদুলের ডুবে যাওয়ার বিষয়টি অন্য কিশোররা স্থানীয়দের জানালে তারা ঘণ্টাখানেক চেষ্টা করে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে বেলা ১টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন।

খবর পেয়ে ওই এলাকায় যান চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এরপর তারা স্থানীয়দের কাছে ঘটনা শুনে রাজশাহীতে ডুবুরি দলকে জানায়। রাজশাহী থেকে ডুবুরি দল সেখানে পৌঁছতে বেজে যায় বিকেল ৪টা। তারা দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর রাশেদুলের মরদেহ উদ্ধার করে।

ওই দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইব্রাহিম আলী আক্ষেপ করে বলেন, ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়ার পর আসতেই অনেক সময় লেগে গেল। এখানে আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কর্মীরা গিয়ে দেখে তারপর ডুবুরিদের খবর দেয়। এতেই অনেক সময় চলে যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব মনিরুজ্জামান মনির বলেন, জেলা শহরগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল থাকা উচিত।

তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো জেলা, সেখানে চারটি বড় নদী আছে, আছে অসংখ্য পুকুর-খাল, তার পরও সেখানে ডুবুরি দল না থাকা হতাশার।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক ছাবের আলী প্রামাণিক জানান, জেলার ফায়ার সার্ভিসে কোনো ডুবুরির পদই নেই। পদ সৃষ্টির জন্য তিনি এর আগে জানিয়েছিলেন।

অন্তত জেলা পর্যায়ের স্টেশনগুলোতে ডুবুরি দল থাকা উচিত বলেও মনে করেন এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘আগে প্রায় সবাই সাঁতার জানত, তখন ডুবে মৃত্যুর ঘটনা খুব বেশি ছিল না, তখন রাজশাহীতে একটা ডুবুরি দল ছিল, তারাই গোটা বিভাগে কাজ করতেন। এখন ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই সাঁতার জানে না, নদীতে ঘুরতে যায়, পানিতে নেমে ডুবে যায়। এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে গেছে। একটা ডুবুরি দল দিয়ে এখন উদ্ধারকাজ কঠিনই হয়ে পড়েছে।’

‘এখানকার ফায়ারম্যানদের কিছুটা প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, যাতে তারাও কিছুটা উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করতে পারে। তবে অন্তত দুজন পূর্ণ ডুবুরি না থাকলে হয় না, পানির নিচে যিনি থাকেন তার কাছে সঠিক সংকেত পাঠাতে হয় রশির মাধ্যমে। একজন ডুবুরিই ডুবুরির সেই সংকেতের ভাষা বোঝেন ও বোঝাতে পারেন।’

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের এখানে পুরো বিভাগের জন্য তিনজন ডুবুরি রয়েছেন। পদই তিনটি। তারায় পুরো বিভাগে কাজ করেন। মূলত একটি টিম হিসেবে তারা কাজ করে। এই টিমের জন্য একটি গাড়ি আছে। বিভাগের যেকোনো জেলায় ঘটনার খবর পেলে তারা সেখানে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।

‘এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই আমরা সংকটে পড়ি। কারণ একটি উদ্ধারকাজ চলাকালে আরেকটির খবর এলে দ্বিতীয় টিম দেয়ার সুযোগ নেই। তারা সেই অভিযান শেষ করে, তার পরে আরেকটিতে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমরা যেটি করি সেটি হলো, আমাদের এখানে তিনজন ডুবুরি পদোন্নতি পেয়ে এখন লিডার হয়েছেন। এটি তাদের কাজ না হলেও আমরা তাদের দিয়ে এই কাজটি করিয়ে থাকি; মূলত জরুরি মুহূর্তে তাদের মাঠে নামাতেই হয়।’

আব্দুর রশিদ জানান, সেখানেও সমস্যা হয়। একটি টিম অভিযানে গেলে দ্বিতীয় টিমের কাছে আর সরঞ্জাম থাকে না। দড়ি, অক্সিজেনসহ যেসব সরঞ্জাম লাগে, সেগুলো দ্বিতীয় টিমকে দেয়া যায় না। এ সময় কোনোমতে কাজ করার জন্য তারা মাঠে নামেন। প্রথম দল কাজ শেষ করে এলে দ্বিতীয় দলের কাছে গিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করে।

রশিদ বলেন, ‘যেহেতু পুরো বিভাগটা একেবারে ছোট না, এক জেলার অভিযান শেষ করতে গিয়েই অনেক সময় লেগে যায়। আবার রাজশাহী থেকে অন্য জেলাগুলোতে যেতেও অনেকটা সময় লেগে যায়। এ কারণে স্থানীয়রা কখনো কখনো নাখোশও হন।

‘আমাদের ওপর সাধারণ মানুষ ভরসা করে থাকেন, আমাদের যে লোকবল আছে তা দিয়েই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। আমাদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমরা সদর দপ্তরে জানিয়েছি। এর মধ্যে সারা দেশের জন্য কিছু ডুবুরি নিয়োগ দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেগুলো শূন্য পদের বিপরীতে। আমাদের এখানে যেহেতু পদ শূন্য নাই, সে কারণে আমরা পাইনি।’

এ বিভাগের আরো খবর