গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর করোনা শনাক্ত হওয়ায় ওই শ্রেণির পাঠদান ১৪ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ওই শ্রেণির বাকি শিক্ষার্থীকে।
তবে স্বাভাবিক রয়েছে অন্য শ্রেণির পাঠদান। শিক্ষার্থী উপস্থিতিও আছে সন্তোষজনক।
কোটালীপাড়া উপজেলার ৪ নম্বর ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহেলী পারভীন পান্না নিউজবাংলাকে জানান, তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির চারজন শিক্ষার্থীর ঠাণ্ডা-জ্বর। তাদের মধ্যে তিনা খানম ও তার মা করোনা পরীক্ষা করালে ১৭ সেপ্টেম্বর দুজনেরই পজিটিভ ফল আসে। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে ১৮ তারিখ থেকে ১৪ দিন ওই ক্লাসের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
পান্না বলেন, ‘আমরা খবর নিয়ে জেনেছি ওই ছাত্রীর মামা-মামি করোনা আক্রান্ত ছিলেন। ধারণা করছি, তাদের থেকেই তিনা ও তার মা সংক্রমিত হয়েছেন। তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো আছে।
‘বাকি তিন শিক্ষার্থীরও করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের নেগেটিভ ফল এসেছে। তারপরও তাদের কিছুদিন স্কুলে না পাঠানোর জন্য অভিভাবককে বলা হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে কোনো আতঙ্ক কাজ করছে না বলে জানান এই শিক্ষক।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুশান্ত বৈদ্য বলেন, ‘আক্রান্ত ওই শিক্ষার্থী ও তার মা সুস্থ আছেন। আমরা তাদের করোনার চিকিৎসা দিয়েছি। তারা হোম আইসোলেশনে আছে।’
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ফেরদাউজ খান বলে, ‘অনেকদিন পর স্কুল খুলেছে। আমরা প্রতিদিন সবাই মাস্ক পরে স্কুলে আসি। করোনা নিয়ে আমাদের কোনো ভয় নাই।’
এক শিক্ষার্থীর মা আসমা বেগম বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাই না স্কুল আর বন্ধ থাকুক।’
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয় ছুটির মেয়াদ। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এরপর আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি হিসেবে ১৯টি নির্দেশনা জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এসব নির্দেশনা মেনে ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অর্পিতা মন্ডল জানান, শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মেপে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করানো হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করানো হয়। এক শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হলেও বিদ্যালয়ের উপস্থিতির হার সন্তোষজনক।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সোহরাব গাজী জানান, স্কুলে আসা সব শিক্ষার্থীর শারীরিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকার ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী পাঠদান চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘আমরা সব স্কুল মনিটর করছি। কোনো শিক্ষার্থীর করোনা উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তার নমুনা পরীক্ষা করা হবে। রিপোর্ট পজিটিভ এলে ওই শ্রেণি বা স্কুল বন্ধ করে দেয়া হবে।’