জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেখানে পৌঁছানোর আগেই দেশটিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এ ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক দুরভিসন্ধি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি একদিকে যেমন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তেমনি বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
রোববার সকালে ঢাকার সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
কাদের বলেন, ‘আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, এই গুরুত্বপূর্ণ সফরকে কেন্দ্র করে নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছানোর আগেই বিক্ষোভ শুরু করছে বিএনপি। তারা একদিকে যেমন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে, অন্যদিকে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমরা বিএনপির এই ষড়যন্ত্রমূলক দুরভিসন্ধির তীব্র নিন্দা করছি।’
প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসে স্লোগান দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা। এর কাছেই বিএনপি, যুবদল, জাসাসের নেতা-কর্মীরা জড় হয়ে পাল্টা স্লোগান দেয়া শুরু করলে উত্তেজনা শুরু হয়।
পরে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় হামলা, পাল্টা হামলা, ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলের আশপাশে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে গত ১৯ মাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফর করেননি। কিন্তু জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে তিনি যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অধিবেশনে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট আলাপ-আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’
এ কারণে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত না হয়ে সশরীরে অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন বলে জানান আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ সভার গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে করোনা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের সুবৃহৎ ফোরামে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে কথা বলার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি।’
‘বিএনপির বৈঠকের উদ্দেশ্য বিশৃঙ্খলা’
অপরাজনীতির কারণে বিএনপি জনগণের আস্থা হারিয়েছে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এখন ঘরোয়া সিরিজ বৈঠক করছে, এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা। আন্দোলনের নামে সহিংসতার উপাদান যুক্ত করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা। তারা সেই অপকৌশল নিয়ে আজকে এ ধরনের বৈঠক করে যাচ্ছে।’
বিএনপির এমন কর্মসূচি ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা’র জন্য নয় বলে মন্তব্য করেন কাদের।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে তারা আবারও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে নতুন নতুন কৌশলে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’
দেশের চলমান স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা করলেও বিএনপি সফল হবে না বলে জানান আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘তারা সাম্প্রতিক উপনির্বাচন ও নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নেতিবাচক রাজনীতির যে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে তাতে জনবিচ্ছিন্নতার দিকে বিএনপি আরও একধাপ এগিয়ে গেছে।’
জনগণ জেগে ওঠার আগেই হঠকারী রাজনীতির জন্য বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা সুযোগসন্ধানী ও মতলববাজ বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কাদের বলেন, ‘জনগণকে ধোঁকা দেয়া অনেক আগেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন স্পষ্ট হতে চলেছে নিজ দলের কর্মী-সমর্থকদের ধোঁকা দেয়ার চাতুর্য।’
দেশের জনগণ এখন স্বস্তিতে আছে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করে জীবিকার চাকা সচল রাখতে মানুষ এখন ব্যস্ত। ধীরে ধীরে প্রতিটি খাত চাঙা হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এমন স্বস্তি বিএনপি মেনে নিতে পারছে না। সরকারের উন্নয়ন তাদের সহ্য হচ্ছে না। তারা দেশের স্থিতিশীলতা চায় না। চায় অস্থিরতা।’