টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতা হয়। ফলে পানিতে সড়ক ও খাল-নালা একাকার হয়ে যায়। এর মধ্যে দোকানে যাওয়ার পথে মুরাদপুর এলাকায় গত ২৫ আগস্ট খালে পড়ে তলিয়ে যান ব্যবসায়ী ছালেহ আহমেদ। কিন্তু এখনও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন, তা কেউ জানে না।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, ছালেহ আহমেদের বেঁচে থাকার সুযোগ কম। কিন্তু নিখোঁজ হওয়ার এক মাস হতে চললেও তার মরদেহটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সম্ভবত তিনি মাটি বা বালিচাপা পড়েছেন।
ছালেহ আহমেদের পরিবার তার বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছে। পরিবারের চাওয়া এখন ছালেহ আহমেদের মরদেহ।
ছালেহ আহমেদের মা ৮০ বছর বয়সী জাহানারা বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘পুতরে আর জ্যাতা ন ফাইওম। আশা ছাড়ি দি। এহন লাশশো চাইর। কবর অইলো দিইয়ারে শান্তি ফাইতাম।’চকবাজার এলাকায় সবজির দোকান ছিল ছালেহ আহমেদের। তার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ার মনসা গ্রামে।ঘটনার দিন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার দরবার শরিফে যাওয়ার জন্য মুরাদপুরে এসেছিলেন তিনি। সেখান থেকে বাসে দরবার শরিফে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই পানিতে তলিয়ে যান ছালেহ।
দুই সন্তানের জনক ছালেহ। স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, ছেলে ছাদেক উল্লাহ মাহিন ও মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া। ঘরের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি।ছাদেক উল্লাহ মাহিন বলেন, ‘এখনো বাবার খোঁজ পাচ্ছি না। তিনি হয়তো বেঁচে নেই। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন শুধু মরদেহটা চাই।’
ছালেহ আহমেদ চশমা খালে তলিয়ে গিয়েছিলেন। ওই খালের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মির্জা খাল। এরপর খালটি গিয়ে পড়েছে কর্ণফুলী নদীতে। ইতোমধ্যে চশমা খাল এবং এর সঙ্গে যুক্ত মির্জা খালেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খোঁজ করেছেন। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীতে খোঁজ করেছে ডুবুরিরা। কিন্তু কোথাও তার দেখা মেলেনি। তবে ছালেহ আহমেদের উদ্ধারে হাল ছেড়ে দিতে নারাজা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাই এখনো মাঝেমধ্যে খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন।চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ‘কোনো মানুষ পানিতে ডুবে গেলে কয়েক দিনের মধ্যে মরদেহ ভেসে ওঠে। এটাই নিয়ম। আমার অভিজ্ঞতা এমনটা বলছে। কিন্তু ছালেহ আহমেদের কোনো খোঁজ মিলছে না। হয়তো তিনি বেঁচে নেই। তবে মরদেহটা অন্তত আমরা খুঁজে বের করতে চাই। তাই খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলমান থাকবে।’