বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক বৈঠকে প্রকল্পের ব্যয় কমল ২০০ কোটি টাকা

  •    
  • ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:১২

ফাইভ-জির উপযোগী করে বিটিসিএলের নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন করতে বিটিসিএলের একটি প্রকল্প ঘুরছে কয়েক বছর ধরে। পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন বলছে, প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে সমীক্ষা করা হয়নি। সমীক্ষার পর প্রকল্পের ব্যয় এক ধাক্কায় ২০০ কোটি টাকা কমে গেছে। তবে আরও বেশ কিছু আপত্তি রয়েছে মূল্যায়নে।

ত্রুটিপূর্ণ প্রস্তাবের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিডেটের (বিটিসিএল) ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার ৩৬৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ফিরিয়ে দেয় পরিকল্পনা কমিশন।

যথাযথ সমীক্ষা ছাড়া অনেকটা ধারণার ভিত্তিতে তিন বছর পর একই প্রকল্প তিন গুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে ১ কোটি ২৬৫ টাকা প্রাক্কলন করে আবার কমিশনে প্রস্তাব পাঠায় বিটিসিএল। এটি ছিল প্রথম প্রস্তাবের প্রায় সাড়ে তিন গুণ এবং ৮৯৬ কোটি টাকা বেশি।

তবে এবারও আপত্তি তোলে কমিশন। মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে তৃতীয় পক্ষ দিয়ে আবারও বিস্তারিত সমীক্ষা করার জন্য ফেরত পাঠায় প্রকল্প। এতে দ্বিতীয় প্রস্তাব থেকে ২০১ কোটি টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৬৪ টাকা নতুন ব্যয় প্রাক্কলন করে বিটিসিএল। তৃতীয় প্রস্তাবের ওপরও নানা আপত্তি রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের।

এমন ঘটনা ঘটেছে ‘ফাইভ-জি উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে। সম্পূর্ণ দেশি অর্থায়নের এ প্রকল্পটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) বাস্তবায়ন করতে চায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, শুরুতে ২০১৮ সালে এ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আসে। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল অক্টোবর ২০১৮ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২১ এবং প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

তখন চীনের অর্থায়নে অন্য একটি প্রকল্প চলমান ছিল। আইসিটি বিভাগের একই ধরনের প্রকল্পও ছিল। তাই বিটিসিএলকে নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব না করে চলমান অন্য প্রকল্পের সঙ্গে এটির কোনো দ্বৈধতা (ওভারল্যাপ) আছে কি না, তা যাচাই করতে এবং এ প্রকল্পে জনবলের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ নিয়ে আবার প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করতে বলে কমিশন।

পরে ২০২০ সালে আবার প্রস্তাব পাঠায় বিটিসিএল, কিন্তু এবার প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১ হাজার ২৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকাল প্রস্তাব করা হয় জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৩। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হলে তার ওপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে পিইসির (মূল্যায়ন কমিটি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সভায় বলা হয়, যে প্রকল্প শুরুতে ছিল ৩৬৮ কোটি টাকা, তা পরবর্তী সময়ে প্রাক্কলন করা হয় ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। এ থেকে বোঝা যায়, সমীক্ষা সঠিকভাবে প্রণয়ন করা হয়নি। কোনো নির্ভরযোগ্য সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল। তাই পিইসি সভার একটি সিদ্ধান্ত ছিল, যথাযথ কারিগরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তৃতীয় পক্ষ দিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করিয়ে পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে হবে।

পিইসি সভার এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় পক্ষ দিয়ে সম্ভাব্য সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।

বুয়েটের করা সে সমীক্ষা অনুযায়ী, ডিপিপি পুনর্গঠন করে প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১ হাজার ৬৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করে এটি অনুমোদনের জন্য আবার পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এতে প্রকল্পের নতুন ব্যয় আগের প্রস্তাবিত ব্যয়ের চেয়ে ২০১ কোটি টাকা কমে যায়। প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে ৭১৩ কোটি টাকা ঋণ হিসাবে দেবে সরকার। এ ঋণ ৫ শতাংশ সুদে ১৩ বছরে সরকারকে শোধ দিতে হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সেবামূলক কাজই বেশি করে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ সরকারকে করতে হবে। এ জন্য সংস্থাটির সেবার আওতা বাড়াতে নতুন প্রকল্প নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। এতে ফাইভ-জি ‍সুবিধার অবকাঠামো তৈরি এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণ হবে।’

প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি সম্পর্কে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথম প্রস্তাবের চেয়ে সর্বশেষ প্রস্তাবে কাজের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। আগে জেলা শহর পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক উন্নয়নের কথা থাকলেও এখন তা উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যন্ত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নেটওয়ার্ক আধুনিক করার জন্য অনেক যন্ত্রপাতিও কেনা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। তাই ব্যয় আগের চেয়ে বেড়েছে।’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলছে, বর্তমানে দেশে ৬ লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করছেন। তাদের মধ্যে ১১ শতাংশ নারী। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মোট আন্তর্জাতিক শেয়ারে বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ অবদান রয়েছে, যা সারা বিশ্বে দ্বিতীয়। এই পেশায় নারীদের অবদান বাড়াতে হলে আরও অনেককে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি কোণে অবস্থানরত শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের ইন্টারনেট পেনিট্রেশন ১৩ শতাংশ, যা অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় অনেক কম। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হওয়ার জন্য সারা বাংলাদেশে ইন্টারনেটের পেনিট্রেশন প্রায় ৯০ শতাংশ হতে হবে। এ কারণেই পুরো দেশকে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার কেব্‌ল লিংক সুবিধার আওতায় আনা এবং বিটিসিএলের টেলিযোগাযোগ কাঠামো আধুনিকীকরণসহ উচ্চমানের ট্রান্সমিশন সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের যত আপত্তি

কমিশন বলছে, নতুন করে যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, তাতে কমিশন সন্তুষ্ট নয়। কমিশন থেকে আরও বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবনার সঙ্গে বুয়েটের সমীক্ষার বিস্তারিত সুপারিশও দাখিল করতে হবে।

প্রকল্পের প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে ৩০ জনের বিদেশ ভ্রমণ বাবদ ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়ার্কশপের জন্য ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশন এটির যৌক্তিকতা জানতে চাইবে।

সম্ভাব্য সমীক্ষা প্রতিবেদনে কনসালটেন্সি বাবদ ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হলেও ডিপিপিতে তা কমিয়ে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু এ খাতের অবশিষ্ট অর্থ মোট প্রকল্প ব্যয় থেকে বাদ না দিয়ে অন্য অঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার কারণ জানতে চাইবে কমিশন।

প্রকল্পের আওতায় ৩৬ মাসের জন্য ১২টি যানবাহন ভাড়া বাবদ ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ছয়টি মোটরসাইকেলসহ ১১টি মোটরযান ক্রয় বাবদ ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং জ্বালানি বাবদ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রস্তাব করার কারণ জানাতে হবে।

তিন বছরের প্রকল্পে ৩৯ জনের ভাতা বাবদ ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে যাচ্ছে কমিশন।

কমিশন বলছে, এ ক্ষেত্রে ৬৪ জেলার মডার্নাইজেশন অফ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক শীর্ষক প্রকল্পসহ বিদ্যমান ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি খুবই কম দেখানো হয়েছে। এখানে বরগুনায় ১২ জিবিপিএস, বরিশালে ৬০ জিবিপিএস, ভোলায় ১৩ জিবিপিএস, ঝালকাঠিতে ১১ জিবিপিএস দেখানো হয়েছে। এ প্রকল্পে বরগুনায় ২০০ জিবিপিএস, বরিশালে ৪৫০ জিবিপিএস, ভোলায় ৩০০ জিবিপিএস, ঝালকাঠিতে ২০০ জিবিপিএস বৃদ্ধি করা হবে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশন মনে করছে, আগের প্রকল্পসহ বিদ্যমান ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি এত কম হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

প্রকল্পটি নিয়ে অর্থ বিভাগে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জনবল নির্ধারণ কমিটির সভায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পর্যায়ে ৩৯ জন জনবলের সুপারিশ করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে জনবল নিয়োগে কোনো অসুবিধা হবে কিনা- এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত প্রয়োজন বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।

বিটিসিএল ভবন

কী থাকবে প্রকল্পে

প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দেশের সব জায়গায় নিরবচ্ছিন্ন সর্বাধুনিক টেলিযোগাযোগ ও আধুনিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়া এবং বর্ধিষ্ণু চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নতকরণ এবং সম্প্রসারণ করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য, বলছে বিটিসিএল।

বিটিসিএল এও বলছে, প্রকল্পের মাধ্যমে বিটিসিএলের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ককে নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য দেশের ৬৪ জেলা এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা ব্যাক-আপ অপটিক্যাল লিংক সুবিধার আওতায় আনা হবে। ঢাকা মহানগরে ব্যাক-আপ লিংক তৈরি করা হবে। বর্তমান ফোর-জি নেটওয়ার্কের চাহিদা বৃদ্ধি ও আসন্ন ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ককে আধুনিকীকরণের জন্য দেশব্যাপী আটটি ক্লাস্টার (চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, খুলনা এবং বরিশাল) স্থাপন, ক্লাস্টার থেকে জেলা, জেলা থেকে উপজেলা পর্যন্ত উচ্চগতির ব্যান্ডউইথ বিতরণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, রাউটার, এসএফপি মডিউল ইত্যাদি স্থাপন করা হবে।

এ ছাড়া ব্যাক-আপ রিং নেটওয়ার্কে রূপান্তরের জন্য দেশব্যাপী ১৪৬টি ওএফসি লিংক (ভূগর্ভস্থ) এবং আটটি ওএফসি লিংক (সাবমেরিন/নদীর তলদেশ দিয়ে) স্থাপন, ওএফসি ভূগর্ভস্থ কেব্‌ল স্থাপন, ৩ হাজার ১৪৪ কিলোমিটার সাবমেরিন কেব্‌ল স্থাপন ৩৯ কিলোমিটার।

এ বিভাগের আরো খবর