বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মন খুলে গ্রাফিতি আঁকার গলি

  • সাবিহা ইশরাত জাহান স্টেলা, মেরিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র   
  • ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২১:১১

২০০৫ সালে ওয়্যারহাউস তাদের স্টুডিও সরিয়ে নেয় ঠিক গ্রাফিতি অ্যালের সামনে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও নিয়ম করা হয়, মেরিল্যান্ডে কেউ গ্রাফিতি আঁকতে চাইলে সোজা চলে যাবেন ওখানে। যত খুশি বা যা খুশি আঁকা হোক না কেন, মানতে হবে না কোনো নিয়ম। পড়তে হবে না আইনের বেড়াজালে।

গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্র আঁকার মধ্য দিয়ে মনের চাপ কমানোর কথা কি আগে শুনেছেন? অথবা শুধু একটি গলি, যেটিকে পরিণত করা হয়েছে কেবল দেয়ালচিত্র আঁকার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায়- শুনেছেন কি সেই জায়গার নাম?

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড রাজ্যের বাল্টিমোর নগরীতে এই ‘গ্রাফিতি অ্যালি’ বা ‘দেয়ালচিত্রের গলি’র অবস্থান। প্রাচীন এই মার্কিন নগরী বহু কারণেই বিখ্যাত। তবে যে রাজ্যে দেয়ালে সামান্য আঁকিবুঁকিতেও পকেট থেকে খসতে পারে অন্তত আড়াই হাজার ডলার বা ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি। সঙ্গে কারাদণ্ডও ভোগ করতে হতে পারে।

সেখানে কীভাবে একটি গলির সবগুলো দেয়াল পরিণত হলো কেবল গ্রাফিতি আঁকার জন্য?

গ্রাফিতি কী, সেটা কমবেশি জানা থাকলেও আবার ঝালিয়ে নেয়া যেতে পারে। জনগণের দৃষ্টিসীমায় যেকোনো দেয়াল, সড়ক, বাড়ির দরজায় কিছু এঁকে রাখাকেই গ্রাফিতি বলা হয়। ধারণা করা হয়, প্রাচীন মিসর বা গ্রিসে এর জন্ম হাজার বছর আগে। (সূত্র:উইকিপিডিয়া)

যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেই গ্রাফিতির ব্যবহার হয়ে আসছে। বাল্টিমোরের গ্রাফিতি গলিকে ধারণ করছে ‘গ্রাফিতি ওয়্যারহাউস’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। যারা মূলত স্ট্রিট আর্টিস্ট বা পথশিল্পীদের নিয়ে কাজ করে থাকে।

বহুদিন থেকেই বাল্টিমোরের ওই জায়গাটি ছিল অপরাধী চক্রের দখলে। বিভিন্ন মাদক কারবারি দলের সদস্যরাই সেখানে গ্রাফিতি আঁকতেন। মানতেন না কোনো বিধিনিষেধ। এরই মধ্যে কিছু গ্রাফিতির দেখা মেলে যেগুলো ছিল দারুণ নান্দনিক। মেরিল্যান্ডের আর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট ইনস্টিটিউটসংলগ্ন হওয়ায় গলিটি সহজেই চোখে পড়ে যায় গ্রাফিতি ওয়্যারহাউস কর্তৃপক্ষের।

২০০৫ সালে ওয়্যারহাউস তাদের স্টুডিও সরিয়ে নেয় ঠিক গ্রাফিতি অ্যালের সামনে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও নিয়ম করা হয়, মেরিল্যান্ডে কেউ গ্রাফিতি আঁকতে চাইলে সোজা চলে যাবেন ওখানে। যত খুশি বা যা খুশি আঁকা হোক না কেন, মানতে হবে না কোনো নিয়ম। পড়তে হবে না আইনের বেড়াজালে।

এখন এই গলিতে গ্রাফিতি আঁকতে আসেন বহু দূরের রাজ্যের বাসিন্দারা। মন খুলে এঁকে যান যা ইচ্ছা।

যা খুশি আঁকার বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা যাক। গলিতে গিয়ে চোখে পড়ল যুক্তরাষ্ট্রের পপ তারকা বিয়ন্সের গ্রাফিতি। সঙ্গে রয়েছে বেশ কঠিন কিন্তু সরেস কোনো বার্তা। অথবা হিজাব পরিহিত মুসলিম নারী বন্দুক তাক করে রয়েছেন আপনারই দিকে। স্প্রে পেইন্টে নিচে লেখা ‘নো রুলস্’। যার বাংলা করলে বলা যেতে পারে ‘কোনো নিয়ম নয়’।

আছে বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রে বাগস বানির বিশাল গ্রাফিতি। কিন্তু বাগসকে পরিণত করা হয়েছে আবেদনময়ী নারীতে। কারণ হিসেবে শিল্পী নিচে লিখে গেছেন, ‘শরীরই তো সবকিছু, তাই বাগসের এই দশা’।

ইংরেজি ‘এল’ আকৃতির এই গলির পুরোটাই রঙের ছড়াছড়ি। সঙ্গে আছে রঙের গন্ধ। গ্রাফিতি আঁকতে মূলত স্প্রে পেইন্ট ব্যবহার করা হয়। সঙ্গে ম্যাগাজিনের কাটা অংশ থেকে শুরু করে পানি নিরোধক মেকআপ ব্যবহার হয় সবকিছুই।

সেখানকার ময়লা ফেলার বাক্সগুলোতেও গ্রাফিতি আঁকা। বাদ পড়েনি সিউওয়্যারেজ পাইপ, মিটার বক্স, সুইচ বোর্ড বা রাস্তার একটি অংশও।

এখানে কিন্তু প্রতি সপ্তাহে পাল্টে যায় গ্রাফিতিগুলো। কখনও কখনও পাল্টে যায় এক দিনের ভেতরেই। ছুটির দিনে গ্রাফিতি অ্যালিতে দেখা মিলতে পারে শখের সংগীত শিল্পীর। এসেছেন দারুণ রঙিন এই জায়গায় মিউজিক ভিডিওর শুটিং করতে।

‘বি’ নামের এক শিল্পী জানান বেশির ভাগ শিল্পী এখানে আসেন মনের চাপ কমাতে। গ্রাফিতির সঙ্গে জুড়ে দেয়া বার্তা পছন্দ না হলে পাল্টে দিতে পারেন যে কেউ। কিন্তু চেষ্টা করা হয় সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে।

মনের কী কথা প্রকাশ করতে ইচ্ছা করছে? ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন সরকারের ওপর? কোনো ব্যাপারই না। চলে আসুন বাল্টিমোরের গ্রাফিতি অ্যালিতে। এঁকে বা লিখে যান সবকিছু। কোনো সমস্যা নেই।

গভীর রাতে ডিজে পার্টি বা ব্রেক ডান্স গ্রুপ নিয়ে চলতে পারে জন্মদিনের উৎসবও। যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপ্রেমীদের মতে, জায়গাটি এই দেশের একটি 'লুকোনো রতনের' মতোই। (সূত্র: ইয়েল্প)

এটি শুধু শিল্পবোদ্ধাদেরই নয়; টেনে আনতে পারে যেকোনো পর্যটককেই।

এ বিভাগের আরো খবর