ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি ছয় মাস ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। বেশি টাকায় বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এক্স-রে করাতে হচ্ছে রোগীদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি ডিজিটাল ৫০০ এমএম এক্স-রে মেশিনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে এই মেশিনটি বসায়।
চালুর পর দুই থেকে তিনবার যন্ত্রটিতে সমস্যা দেখা দিলে তা মেরামত করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর গত ৩০ মার্চ এক্স-রে মেশিনটির ফিল্ম প্রিন্ট করার অংশে সমস্যা দেখা দেয়। এই অংশের মেরামতের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তা মেরামত করতে ব্যর্থ হন বেঙ্গল সায়েন্টিফিকের প্রকৌশলীরা। মেশিনটির নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশ বাংলাদেশে নেই বলে মেরামত সম্ভব নয় বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি মেরামতের ওয়ারেন্টির সময়সীমাও শেষ হয়ে গেছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
রোগীরা এক্স-রে পরীক্ষার জন্য গেলে মেশিন বিকল জানিয়ে তাদের বাইরে থেকে করানোর পরামর্শ দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০টি ডিজিটাল এক্স-রে পরীক্ষা হতো। এর মধ্যে সিঙ্গেল এক্স-রে পরীক্ষার জন্য ২০০ টাকা এবং ডাবল এক্স-রে পরীক্ষা জন্য ৪০০ টাকা নেয়া হতো। এভাবে প্রতি মাসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারি কোষাগারে কয়েক লাখ টাকা জমা দিতেন। মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ায় সরকারি কোষাগারে কোনো অর্থ জমা পড়ছে না। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগের নারী ও পুরুষ কাউন্টার দুটিতে তখন পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রাম থেকে ২২০ জন রোগী চিকিৎসা নেয়ার জন্য টিকিট কেটেছেন। তাদের অনেকেরই ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসক ডিজিটাল এক্স-রে করানোর জন্য লিখে দিয়েছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা চিনাইরের বাসিন্দা ফজলু মিয়া বলেন, ‘খেলতে গিয়ে আমার ছোট মেয়ে ব্যথা পেয়ে পা ফুলে গেছে। ডাক্তার পায়ের ডিজিটাল এক্স-রে করাতে বলছেন। এসে শুনি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন নষ্ট। তাই ১ হাজার টাকা দিয়ে শহরের মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে মেয়ের এক্স-রে করেছি। অথচ সরকারি হাসপাতালে একই পরীক্ষার ফি ৪০০ টাকা।’
শহরের কাজী পাড়া এলাকার মন্তাজ মিয়া বলেন, ‘বারান্দা থেকে পড়ে হাতের কনুইতে ব্যথা পেয়েছি। ডাক্তার এক্স-রে করাতে বলেছেন। কিন্তু এখানে এক্স-রে করার সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে।’
হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট জহিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির প্রকৌশলী বলেছেন, বিকল এক্স-রে মেশিনের যন্ত্রাংশ মেরামতের ওয়ারেন্টির সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু গত মাসে স্বাস্থ্য বিভাগ এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, মেরামতের সময়সীমা চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। যোগাযোগ করলে এক্স-রে যন্ত্র মেরামত করে দেবে বলে জানিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠান।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, ‘যে কোম্পানি এটি দিয়েছিল, ওই কোম্পানি আর ব্যবসা করে না। তারপরেও সেই কোম্পানির প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। যদি তারা আসে তাহলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। তবে হাসপাতালের অ্যানালগ মেশিন চালু আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোম্পানির লোকজন যদি না আসে, তাহলে ডিসেম্বরের আগে মেরামত সম্ভব না। আর যদি মেরামত না হয়, তাহলে আরেকটি নতুন মেশিন কিনতে হবে। তবে এখন নতুন মেশিন কেনার মতো অর্থ আমাদের কাছে নেই।’