মাদারীপুরে কুমার নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে টেকেরহার-কালীবাড়ি ফিডার সড়কের প্রায় ৯৫ শতাংশ পাকা রাস্তা। সড়কটির আর আড়াই হাত ভাঙলেই ভেসে যাবে পাশের শত হেক্টর জমির ফসল।
নদীর পানিতে ডুবলে চলতি মৌসুমের আমন ধান আর গোলায় তুলতে পারবেন না কৃষক। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে মাদারীপুরের টেকেরহাটের বিদ্যানন্দী গ্রামের পাঁচ শতাধিক কৃষকের।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুমার নদের ভাঙনে পাকা সড়কের অধিকাংশ বিলীন হয়েছে। প্রতিনিয়ত আরও অংশ ভাঙছে। বালুভর্তি কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না।
স্থানীয়রা জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে টেকেরহাট-কালীবাড়ি ফিডার সড়কের নদীর পাড় ভাঙা শুরু হয়। এই সড়কের পাশেই রয়েছে হরিদাসদী-মহেন্দ্রী ইউনিয়নের বিদ্যানন্দী-গোয়ালবাতান ফসলের মাঠ। শত হেক্টরের এ মাঠের প্রায় অর্ধেকে এখন দোল খাচ্ছে উঠতি আমন ধান। সড়কটি পুরো ভেঙে গেলে নদের বালু-পানিতে তলিয়ে যাবে সব ফসল।
বিদ্যানন্দী গ্রামের একাধিক কৃষকের অভিযোগ, ভাঙনের আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কার্যকর ভূমিকা নিলে ঘাম ঝরানো ফসল নিয়ে তাদের শঙ্কা করতে হতো না। এর আগেও তিনবার সড়কটি ভেঙেছে। তখনও স্থায়ী কোনো ভূমিকা নেয়নি পাউবো। এলাকাবাসী নদীতীরবর্তী স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করেন। এরই মধ্যে কালীবাড়ি এলাকায় প্রায় দেড় শ মিটার পাকা রাস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে।
বিদ্যানন্দী-গোয়ালবাতান মাঠের কৃষক ইউনুস আলী বলেন, ‘আমি প্রায় তিন বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। ধানও হয়েছে ভালো। তবে এভাবে যদি নদীর পাড় ভাঙতে থাকে, তাহলে আর ধান ঘরে তুলতে পারব না।
‘বারবার আমাদের ফসল রক্ষার জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বলেছি ওপরে কথা বলতে, তারা কোনো কাজই করে না। এখন ভাঙা কমাতে বালুর বস্তা ফেলছে। জানি না এতে আমাদের ফসল রক্ষা হবে কি না।’
আরেক কৃষক সলেমান ব্যাপারী বলেন, ‘ভাঙা যখন শুরু হয়, তখন সরকারি অফিসাররা এসেছিল। তখনই যদি বালুর বস্তা ফেলত, তাহলে আমাদের এমন দুশ্চিন্তা করতে হতো না।
‘আর দুই বা আড়াই হাত ভাঙলেই নদীর ঘোলা পানিতে সব ফসল শেষ হয়ে যাবে। আর ঘোলা পানি ঢুকলে সামনেও ভালো ফসল হবে না। আমরা এলাকাবাসী দাবি করব আরও দ্রুত বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকাতে।’
জব্বার হোসেন নামে একজন বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর ধরে কুমার নদীর পাড় ভাঙছে। ভাঙন শুরু হলে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়। এরপর আর কোনো খোঁজ থাকে না।
‘এবারও ভাঙন শুরু হওয়ার তিন দিন পর বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে তার আগেই ১০০ মিটার পাড় ভেঙে গেছে। এভাবে চললে আমরা কৃষকরা শেষ। এই ফসলের মাঠে হাজার হাজার মণ ধান-পাট হয়। সেটা আর চোখে দেখা যাবে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিযোগ করেন, কুমার নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রভাবশালী একটি মহল সারা বছরই কুমার নদের বিভিন্ন অংশ থেকে বালু তোলে। এর ফলে প্রতিবছরই নদের তীর ভাঙে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিদ্যানন্দী-গোয়ালবাতান মাঠের পাশে কুমার নদের এলাকাটি নিরিবিলি হওয়ায় এখান থেকে বালু তোলায় কোনো সমস্যা হয় না। এ কারণে এখান থেকে অবাধে বালু তোলা হয়।
অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধ এবং দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করলে অচিরেই কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। এ সড়ক দিয়েই তিনটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে রাজৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফরহাদুল মিরাজ জানান, এ বছর বিদ্যানন্দী-গোয়ালবাতান মাঠে ৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এখানকার ধানের আনুমানিক মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। ভাঙনের স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। কৃষি অফিসের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ফসল আর জমি রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে যাচ্ছি। যেকোনোভাবে ভাঙন রক্ষা করা গেলেই কৃষক ফসল গোলায় ওঠাতে পারবে। আগামী মাসে আমন ধান পাকবে। এই কিছুদিন গেলেই ফসল রক্ষা হবে।’
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নদীর পাড় রক্ষার জন্য ভাঙা অংশে প্রায় সাড়ে সাত হাজার জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদি এতেও ভাঙন না কমে প্রয়োজনে আরও জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
‘তবে কুমার নদে আগের চেয়ে পানি কমতে শুরু করেছে। অবশ্য অনেক সময় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও বাড়ে। আমরা চেষ্টা করছি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের।’