১৯৭২ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাদের ছোড়া বোমার আঘাতে মারা যান হো ভ্যান ল্যাংয়ের মা। এরপরই মাত্র চার বছর বয়সে মানুষের সমাজ থেকে পালিয়ে বাবার সঙ্গে গহীণ অরণ্যে চলে যান ল্যাং। সঙ্গে তার ভাইও ছিল।
জঙ্গলের গভীরে বসবাস করার সময় পুরো পৃথিবী থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তারা। যুদ্ধের ঘোর তাদের কখনোই কাটেনি। জঙ্গলে বসবাসের সময় তারা ভাবতেন, যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি।
শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালে তাদেরকে মানুষের সমাজে ফিরিয়ে আনা হয়। জঙ্গলে তাদের প্রিয় খাবার ছিল বানর, সাপ আর গিরগিটি। এ ছাড়া হাতের কাছে তারা যা পেতেন, তাই খেতেন। খাদ্য হিসেবে ল্যাংয়ের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল ইঁদুরের মাথা।
মজার ব্যাপার হলো- নারীরা কেমন হয় সে সম্পর্কেও কোনো ধারণা ছিল না ল্যাংয়ের। কারণ এ সম্পর্কে তার বাবা কখনোই তাকে কিছু বলেননি।
জঙ্গলে টারজানের মতো জীবন কাটালেও মানুষের সমাজে মোটেও খাপ-খাওয়াতে পারেননি ল্যাং। ফল হয় মারাত্মক। তেল মশলা দিয়ে রান্না করা খাবার খেয়ে অবশেষে লিভার ক্যান্সার হয়ে যায় ল্যাংয়ের। ক্যান্সারে ভুগেই গত ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তার।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের খবরে বলা হয়- অ্যালভারো সিরেজো নামে এক অভিযাত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল ল্যাংয়ের। দুজন মিলে এক সপ্তাহের জন্য জঙ্গলেও বসবাস করে এসেছিলেন।
সিজেরো বলেন, ‘তার মৃত্যুতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। তবে আমি মনে করি, এই মৃত্যু তার মুক্তি। কারণ গত কয়েক মাস ধরেই সে খুব কষ্ট সহ্য করছিল।’
সিজেরো জানান, মানুষের সমাজে ল্যাংয়ের বসবাসকে তিনি পছন্দ করতেন না। কারণ তিনি জানতেন, জঙ্গলের সঙ্গে সমাজের যে বিরাট ব্যাবধান তা ল্যাংয়ের শরীর সহ্য করতে পারবেনা।
সিজেরোর কথাই সত্য হল। বন্ধু সম্পর্কে তার মন্তব্য হলো- ‘ল্যাং ছিল যেন ছোট্ট এক শিশু। কিন্তু তার দক্ষতা ছিল সুপারম্যানের মতো।’