বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মহামারিতে ঝরে গেছে যেসব স্কুল

  •    
  • ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২১:৩৯

হলি চাইল্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক শাহ আলম বলেন, ‘স্কুল বন্ধ না করে উপায় ছিল না। খরচ মেটাতে পারছিলাম না। শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপরই আমাদের সব ব্যয় নির্ভর করে। শিক্ষকদের বেতন, বিল্ডিংয়ের ভাড়া কিছুই দিতে পারছিলাম না। এ বছরের শুরুতে বাধ্য হয়েই বন্ধ করে দিলাম।’

গেটের ওপর সাইনবোর্ডে লেখা হলি চাইল্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুল। ভেতরে গিয়ে দেখা যায় নেই কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী।

মাগুরা শহরের শিবরামপুর এলাকার বেসরকারি এই স্কুলটির বয়স প্রায় ২০ বছর। শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল দুই শতাধিক। করোনামহামারি শেষে দেশের বাকি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো প্রাণ ফেরেনি এই স্কুলে। মহামারিতে হারিয়ে গেছে এটি।

স্কুলের কোনো আয় না থাকায় মাসের পর মাস ভাড়া দিতে না পারায় একপর্যায়ে বন্ধ করে দেন স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক শাহ আলম।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুল বন্ধ না করে উপায় ছিল না। খরচ মেটাতে পারছিলাম না। শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপরই আমাদের সব ব্যয় নির্ভর করে। শিক্ষকদের বেতন, বিল্ডিংয়ের ভাড়া কিছুই দিতে পারছিলাম না। এ বছরের শুরুতে বাধ্য হয়েই বন্ধ করে দিলাম।

‘স্কুল বন্ধ হবার পর থেকে আমি অসুস্থ। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পেরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছি। সাহায্য তেমন একটা পাইনি। আজ সারা দেশের স্কুল-কলেজ খুললেও মনটা খুব খারাপ লাগছে।’

শাহ আলম জানান, করোনাভাইরাসে তিনি হারিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারি। বাকিরা এখন বিভিন্ন পেশায় যুক্ত। শিক্ষার্থীরা চলে গেছে অন্য স্কুলে। দুই-একজন শুধু এসে খোঁজ নিয়ে গেছে স্কুল আবার চালু হবে কি না।

আবার স্কুল চালু করতে যে আর্থিক সক্ষমতার দরকার, শাহ আলমের তা নেই। তবুও তিনি ভাবছেন, কোনোভাবে আবারও দাঁড় করাতে পারেন কি না এই স্কুল।

শুধু এই স্কুলই নয়, এমন অবস্থা মাগুরার আরও সাতটি বেসরকারি স্কুলের।

২০১৪ সালে শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় মারুফুল হাসান নামের এক যুবক প্রতিষ্ঠা করেন পাইওনিয়ার কেজি স্কুল। তিনি বাদে শিক্ষক ছিলেন ছয়জন। ভাড়া শোধ করতে না পেরে এ বছরের জানুয়ারির দিকে তিনি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেন।

মারুফুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুল খুললেও তো কিছু করার নেই। আমি ছেড়ে দেয়ার পর স্কুল ঘরে এখন অন্য মানুষ বসবাস করে। সেখানে আর এখন স্কুলের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই।

‘করোনার আগে ভালোই চলছিল। মহামারিতে সব শেষ হয়ে গেল।’

একই অবস্থা সদরের কাটাখালী বাজার এলাকার সূর্যমুখী প্রি ক্যাডেট স্কুলের।

এর প্রধান শিক্ষক জনি ইসলাম বলেন, ‘ধারদেনা করে গত বছর কোনোমতে ভাড়া দিয়েছি। আশা ছিল দ্রুত সংক্রমণ কমবে কিন্তু এভাবে আর পারছিলাম না। স্কুল বন্ধ করে এখন টিউশনি করছি। করোনা আমার স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।’

খরচ বহন করতে না পারায় বন্ধ হওয়া স্কুলের তালিকায় আছে সদরের রাঘবদাউড় ইউনিয়নের ভোরের আলো স্কুল, নিজনান্দুয়ালী প্রেসিডেন্ট প্রি-ক্যাডেট স্কুল ও মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর বাজার এলাকার রংধনু কিন্ডারগার্টেন স্কুল, শিবরামপুর সড়কের বর্ণমালা কিন্ডারগার্টেন স্কুল।

বেসরকারি যে স্কুলগুলো নিজস্ব জায়গায় তৈরি সেগুলোর বাড়ি ভাড়া দিতে না হওয়ায় টিকে আছে। তবে অনেক শিক্ষক বেতনের অভাবে পেশা পরিবর্তন করেছেন। তাই দেখা দিয়েছে শিক্ষক সংকট।

দীর্ঘ বিরতির পর প্রথম দিন অনেক স্কুলেই শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল বেশ কম।

শ্রীপুর আলোকিত প্রাইভেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জুয়েল জানান, রোববার তার স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল ৫৫ শতাংশ। তবে তার আশা, দিন যাওয়ার সঙ্গে উপস্থিতি বাড়বে।

জেলা কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বশিরুল ইসলাম জানান, শতাধিক বেসরকারি স্কুলের নিবন্ধন আছে। করোনার কারণে যেসব স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলোর সঠিক হিসাব আমাদের কাছে নেই। সমিতির বাইরেও যে অনিবন্ধিত স্কুল ছিল সেগুলোর খবরও জানা নেই।

মাগুরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি নিবন্ধিত স্কুলের সংখ্যা খুবই কম। অনিবন্ধিত স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে তা জানার সুযোগ নেই। তবে যে স্কুলই হোক না কেন বন্ধ হয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক বিষয়।

এ বিভাগের আরো খবর