বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আগের দুই শর্তে ছয় মাসের জন্য মুক্ত করার যে সুপারিশ আইনমন্ত্রী করেছেন, তা বিএনপি নেত্রীর পছন্দ না হলে কারাগারে গিয়ে নতুন করে আবেদন করার পরামর্শ এসেছে।
রোববার রাজধানীতে এক আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। আইন কমিশনের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এই আলোচনা সভা হয়।
বিএনপি নেত্রীর স্বজনরা এবার স্থায়ী মুক্তির আবেদনের পাশাপাশি বিদেশ যেতে দেয়ার অনুরোধও করেছেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী বলেন, ‘যদি এটা করতে হয়, তাহলে যেটা আমি আগেও বলেছি, তাকে আবার জেলে গিয়ে এ আবেদন বাতিল করতে হবে। এরপর আবার নতুন আবেদন করতে হবে। বর্তমান আবেদনে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।’
তিনি বলেন, ‘তিনি যে আবেদন করেছেন, তা ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার একটি আবেদন হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত রেখে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। সেই আবেদনের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাই আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়ে গেল। এ অবস্থায় এটাকে পরিবর্তন করার আইন নেই।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড পরে আপিলে দ্বিগুণ হয়। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার হয় ৭ বছরের কারাদণ্ড।
উচ্চ আদালতে জামিন করাতে ব্যর্থ হওয়ার পর খালেদা জিয়ার স্বজনরা গত বছর প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন নিয়ে যান। সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফেরেন খালেদা জিয়া।
এরপর তার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আরও দুই দফায় ছয় মাস করে বাড়ানো হয়েছে। সবশেষ যে মেয়াদ বাড়ানো হয়, তা শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর।
এবার চতুর্থ দফায় মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে খালেদা জিয়ার স্বজনরা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে স্থায়ীভাবে মুক্ত করে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
এই মুক্তি দেয়া হয়েছে দুটি শর্তে। প্রথমত. খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন না, দ্বিতীয়ত. তিনি চিকিৎসা নেবেন দেশেই।
আইন কমিশনের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে রোববার এক আলোচনা সভায় অংশ নেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। ছবি: নিউজবাংলা
গত এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর স্বজনরা বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করলে সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে যে, এর কোনো সুযোগ আইনে নেই। এরপরও বিএনপি নেত্রীর স্বজনরা আবার একই আবেদন করেছেন।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আগের মতোই দুই শর্তে ছয় মাসের জন্য মুক্ত করার সুপারিশ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরলেই তা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে তোলা হবে। আর শেখ হাসিনা সই করলেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন গত সপ্তাহে এসেছিল। আমরা মতামত দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। তাতে আমরা ছয় মাসের মেয়াদ বাড়াতে মত দিয়েছি।
‘আমি খবর নিয়েছি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সুরক্ষা সচিব দুজনে সরকারি কাজে বিদেশে আছেন। সেজন্য আবেদনটি এখনও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে ফিরে আবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর বরাবর পাঠাবেন।’