বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ‘চাকর-বাকর’ উল্লেখ করায় তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী৷ তবে এই ক্ষমা চাওয়ার সময়ও তিনি আবার ‘চাকর-বাকর’ শব্দ উচ্চারণ করলেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমার সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যে আমার স্নেহাস্পদ ব্যক্তিদের চাকর-বাকর হিসেবে তুলনা করায় তারা মনক্ষুণ্ন হয়েছেন। কষ্ট পেয়েছেন। আমি এসব চাকর-বাকরের কাছে ক্ষমা চাইছি।
‘এসব রাজনৈতিক কর্মীদের চাকরবাকরের গুণাবলিও নেই। তাদের না কবজিতে জোর আছে, না মাথা ঘুরাবার অধিকার আছে। চাকর-বাকর ভাইরা, আপনাদেরকে কাছে আমি ক্ষমা চাই।’
শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জাফরুল্লাহ সরাসরি মির্জা ফখরুলের নাম উল্লেখ না করলেও তিনি যে তাকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলেছেন, সেটি স্পষ্ট। কারণ, আগের দিন তিনি জার্মানিভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলের বাংলা সার্ভিসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপি নেতাকে ‘চাকর-বাকর’ উল্লেখ করেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাফরুল্লাহ ও বিএনপি একে অপরের পাশে দাঁড়ালেও সম্প্রতি দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
গত সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধা দলের এক আলোচনায় মির্জা ফখরুলের উপস্থিতিতে তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে তার মেয়ে জাইমা রহমানকে বিএনপির নেতৃত্বে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গত ৬ সেপ্টেম্বর মির্জা ফখরুল এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘জাফরুল্লাহ সাহেব যে কথা বলেছেন… তার আসলে বয়স হয়ে গেছে। উনি অত্যন্ত সম্মানিত লোক। অত্যন্ত গুণী লোক কিন্তু বয়স হয়ে গেলে মানুষ কিছু উল্টাপাল্টা কথা বলতেই পারেন। এটা স্বাভাবিকভাবে বলেছেন আরকি।
‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তার (জাফরুল্লাহ) মন্তব্যটা যুক্তিসঙ্গত না। তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, কথা বলছেন। কিন্তু তিনি একবারও ভাবছেন না, এসব কথা বললে ফ্যাসিবাদীবিরোধী আন্দোলন কিছুটা ব্যাহত হবে।’
গত ৬ সেপ্টেম্বর মির্জা ফখরুল বলেন, জাফরুল্লাহর বয়স হয়ে যাওয়ায় তিনি উল্টা-পাল্টা বকেন
এর প্রতিক্রিয়ায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী ডয়েচে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেন। তিনি বলেন, ‘বেচারা বাড়ির চাকর বাকরের মতো আছে৷ ভাবছে চাকরি চলে যাবে৷ তার বক্তব্যে আমার হাসি পেয়েছে।’
বয়স হয়ে গেছে বলে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে ফখরুলের বক্তব্যের জবাবে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বয়স আমার হয়েছে, এটা কিন্তু একদম সঠিক কথা। কিন্তু ওই দূরের রঙটাও আমি বলতে পারি। আপনাদের মতো কথায় কথায় বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয় না। কারণ আমার সততা এবং সাহস রয়েছে। আমি জনগণের পক্ষের লোক।’
তিনি বলেন, ‘আমি তারেক রহমানের জায়গায় জায়মাকে ক্ষমতা দিতে বলিনি। আমি বলেছি তাকে রাজনীতি শিখতে দেন, রাজপথে আসতে বলেন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে হলে রাজপথে হাঁটতে হয়।’
সমাবেশে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নতুন কমিটির নেতাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেন নুরুল হক নূর
সভায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নতুন নেতৃত্বকে পরিচয় করিয়ে দেন ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি নুরুল হক নূর। তিনি বলেন, ‘সরকার এখন আতঙ্কিত বোধ করছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা মরণ কামড় দেবে। আমরা জীবিত থাকতে ২০১৪ এবং ১৮ সালের মতো বিনাভোটের নির্বাচন হতে দেবো না।
‘জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা শিগগিরিই রাজপথে নামব। একটি গণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘যারা পদে পদে ভিন্ন মতকে দমন করতে চায়, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চায়, তারাই পাকিস্তানের এজেন্ট। কারণ, পাকিস্তানি শাসকরা এটাই করেছিল। আর যারা এটির প্রতিবাদ করে তারাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত পতাকাবাহী।
‘ভোট দেয়ার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিলে। যারা ভোটের অধিকার কেড়ে নেয় তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবচেয়ে বড় শত্রু।’