বিদেশগামী এক যাত্রীর টাকা-পয়সা, মোবাইল ও কাপড়চোপড় ছিনিয়ে লাপাত্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপপরিদর্শক আকসাদুদ জামানকে অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রংপুরের মিঠাপুকুর এলাকা থেকে বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি উত্তরা বিভাগ। ডাকাতির ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আকসাদুদকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত বছরের ১৯ অক্টোবর রাজধানীর কাওলা এলাকায় ডিবি পরিচয়ে এক বিদেশগামী যাত্রীর কাছ থেকে ৫ হাজার ইউএস ডলার, ২ হাজার দেরহাম ও ২ হাজার টাকা, ২টি ব্যবহৃত মোবাইলসহ কাপড়চোপড়ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়া হয়। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় আকসাদুদকে আগেই বরখাস্ত করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ওই ডাকাতির ঘটনার মামলায় আকসাদুদ এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। পরবর্তীতে আমাদের তদন্তেই তার নাম বেরিয়ে আসে। তাকে গ্রেপ্তারে আমাদের আরও কিছু তথ্য দরকার ছিল। এ ছাড়া এ ঘটনার সব আসামিকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। যেহেতু সে বরখাস্তকৃত আছে, শেষ পর্যন্ত সে পালিয়ে রংপুরে চলে গিয়েছিল। জানি না তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কি না। শেষ পর্যন্ত তাকে রংপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর ভোর পৌনে ৭টায় ভুক্তভোগী বিদেশগামী একজন টিকাটুলির বাসা থেকে সিএনজিতে করে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য বের হন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কাওলা ফুটওভার ব্রিজের নিচে পৌঁছলে একটি মাইক্রোবাস সিএনজিটির গতিরোধ করে। এরপর মাইক্রোবাস থেকে দুজন নেমে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ভুক্তভোগীকে তার লাগেজসহ মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।
তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সঙ্গে থাকা ৫ হাজার ইউএস ডলার, ২ হাজার দেরহাম, ২ হাজার টাকা, ২টি মোবাইলসহ কাপড়চোপড়ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। সকাল ৯টার দিকে রামপুর স্টাফ কোয়াটার্স এলাকায় ভুক্তভোগীকে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, মামলাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় প্রাযুক্তিক সহায়তায় মোশারফ হোসেন, সেলিম মোল্লা, রিপন মোড়ল, আমির হোসেন তালুকদার, বিষ্ণু মিয়া সিকদার ও হাসান রাজা নামে ছয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে হাসান রাজাসহ কয়েকজন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওইসব জবানবন্দি পর্যালোচনায় জানা যায়, ডাকাতিতে সিআইডি ডেমরা জোনের সে সময়কার বরখাস্তকৃত এসআই আকসাদুদ জামান প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
হাফিজ আক্তার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, জড়িত আরও একজন রয়েছেন, যিনি পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যও রয়েছেন। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আমরা সবগুলো বিষয়ই তদন্তে আনছি।’
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার বরখাস্তকৃত এসআই আকসাদুদ ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। তার নেতৃত্বেই ডাকাতি হয়েছিল বলে স্বীকার করেন তিনি।