ক্রমেই এগিয়ে আসছে দুর্গাপূজার তিথি। পঞ্জিকা মতে আর মাত্র ৩২ দিনের অপেক্ষা। ঢাকে কাঠি পড়বে ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর দিন।
শরতের এই অকালবোধনে স্বামীর বাড়ি কৈলাশ থেকে মর্ত্যে বাপের বাড়ি আসবেন দশভূজা দুর্গা। সঙ্গে থাকবে তার চার ছেলেমেয়ে, প্রত্যেকের বাহন এবং মহিষাসুর।
বেলপাতা, ধান-দূর্বাসহ হরেক উপকরণে পূজিত হবেন তিনি। নানা আচার-উপাচার মেনে দশমীর দিন দেবীকে বিদায় দেবেন ভক্তরা।
এবার দেবী আসবেন ঘোড়া বা ঘোটকে চড়ে, ফিরে যাবেন দোলায়। দোলা হলো মড়কের প্রতীক, মহামারির চিহ্ন। তবে দেবীর আগমনও শুভ বার্তার প্রতীক না। ঘোড়ায় আসলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে, সামাজিক ও রাজনৈতিকস্তরে ধ্বংস ও অস্থিরতা বিরাজ করে।
বাঙালি হিন্দুদের এই মহোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে ঝিনাইদহের শিল্পীদের।
লকডাউন শিথিল হওয়ার কারণে বেড়েছে কাজের চাপ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিমা বুঝিয়ে দিতে কাজ করছেন তারা।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শিল্পীর নিপুণ হাতে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। রাতদিন পরিশ্রম করে মাটি দিয়ে দেবীর অবয়ব নির্মাণ করছেন কারিগররা। পাশাপাশি চলছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের প্রতিমা তৈরির কাজ।
খোকন কুমার বিশ্বাস নামের এক কারিগর বলেন, ‘গত বছর করোনার কারণে আমাদের কাজ কম ছিল। আয়ও গত বছর কম হয়েছে। করোনার কারণে প্রতিমাও কম তৈরি করেছিলাম। কিন্তু এ বছর প্রতিমা বেশি বানাচ্ছি। এতে আমরা খুশি।’
আকাশ দাশ নামের এক শিল্পী বলেন, ‘আমাগের খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। সকাল ৬ডা থেকে শুরু কইরে রাত পর্যন্ত কাজ করতি হচ্চে। তবুও ভালো কিছু টাকা তো হবিনি।’
সুজন পাল নামের এক শিল্পী বলেন, ‘এবার আমরা তো প্রথম দিকে অনিশ্চতায় ছিলাম। কাজ কয়টা হবে তা ঠিক হয়নি। লকডাউন খুলে দিয়ার জন্যি হঠাৎ করে কাজ বাইড়ে গেছে। তাই রাতদিন কাজ করতি হচ্চে। কিন্তু এবার প্রতিমা তৈরির সব মালামালের দাম প্রায় দ্বিগুণ হই গেচে। খরচ এবার একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে তাই।’
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার গাঙ্গুলী বলেন, ‘এ বছর জেলার ছয় উপজেলার ৪৩২টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গোৎসব পালনে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জীবাণুনাশক স্প্রে, শতভাগ মাস্ক পরিধানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণ যেন না বাড়ে, সে ব্যাপারে সচেতন আছি আমরা।’
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার (এসপি) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রতিটা মণ্ডপ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারিতে থাকবে।’