মাদারীপুরে ছোট-বড় ৭টি নদ-নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসতবাড়ি, দোকানপাটসহ ফসলি জমি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের ভয়ে অনেকেই বাড়িঘর ও দোকানপাট সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র।
বুধবার পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে জানা যায়, গত দুই দিনে ৪টি বসতবাড়ি ও ৩টি দোকান বিলীন হয়েছে। কয়েকটি দোকান অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় লোকজন।
ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও কয়েকটি বসতবাড়ি, মসজিদসহ ৩০টি দোকান। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, গেল এক সপ্তাহে আড়িয়াল খাঁ নদীতে ২৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্টে বর্তমানে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য নদ-নদীতেও পানি বেড়েছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে ভাঙন শুরু হয়েছে অনেক ইউনিয়নে। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডও জিও ব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
মহিষের চর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষার মৌসুম আসলেই ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। বিগত দিনেও এই এলাকার ৩০ থেকে ৪০টি দোকানপাট নদীতে নিয়ে গেছে। গত বছর বেশ কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু এবার এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। যদি এভাবে প্রতি বছর ভাঙতে থাকে তাহলে একদিন এই পুরাতন ফেরিঘাট নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’
ভাঙনের মুখে থাকা স্থানীয় দোকানদার ওয়াদুদ খান বলেন, ‘আমরা খুব ঝুঁকির মুখে আছি। আমার পাশের তিনডা দোকান নদীতে নিয়ে গেছে। দোকানগুলোয় দুই লাখ টাকার মাল আছিল। আর মাত্র তিন-চার হাত ভাঙলেই আমার দোকানডা ওই নদীতে চইল্লা যাইব। বউ পোলাপাইন লইয়া কি খামু আর কই থাকুম। আমাগো মরা ছাড়া আর গতি নাই। সরকার যদি একটা পাকা বান্ধের (বেড়িবাঁধ) ব্যবস্থা করত তাইলে অন্তত ভরসা পাইতাম।’
ক্ষতিগ্রস্ত মজনু মোল্লা তার বসতবাড়ির জায়গা দেখিয়ে বলেন, ‘ওই খানেই আমার ঘর আছিল। নদীতে সব লইয়া গেছে। কোনো মতে মাল-সামানা লইয়া মাইনসের জায়গায় রাখছি। একসময় বড় বড় গাছ আর ৪০ শতাংশ জমি ছিল আমার। এই বাঁধে ভাঙতে ভাঙতে আমার বাড়িডাও নদীতে লইয়া গেল। এখন কই থাকমু নিজেও জানি না।’
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত আজগর মাতবর বলেন, ‘আমার এইখানে একটা মুরগির খামার ছিল। ভাঙনের জন্য সরাইয়া নিছি। আমার পাকা ঘরটাও ভাঙনের মুখে আছে। যদি সরকার এখানে কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যেই আমার মূল বাড়িটাও চলে যাবে।’
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অতি দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেব। গত বছর কিছু জায়গায় প্রায় ৬ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছিলাম। কিন্তু সেটা নদীর পানির তোড়ে বিলীন হয়ে গেছে।’