চলতি বছরের প্রাথমিক, ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাদ্রাসার জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
গত বছরের মতো এবারও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় ‘অটোপাস’ দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন একজন কর্মকর্তা। তবে এবার অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নে কিছু নম্বর যোগ করা হতে পারে।
জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা হয়ে থাকে বছরের নভেম্বর মাসে। করোনার কারণে গত বছর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হয়নি। নিজ নিজ মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে স্কুল ও মাদ্রাসাগুলো।
এখন পর্যন্ত জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানালেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে খুব শিগগির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, বোর্ডগুলো এখন পর্যন্ত জেএসসি পরীক্ষার কোনো প্রস্তুতি নেয়নি। কারণ, বোর্ডগুলো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিতেই ব্যস্ত সময় পার করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, জেএসসি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা থাকলে এ মাসেই পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও প্রশ্নপত্র ছাপার কাজ শুরু হতো। আর স্কুল খোলার রুটিনেও অষ্টম শ্রেণির ক্লাস অন্যান্য শ্রেণির মতো সপ্তাহে এক দিন নেয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে এসএসসি, এইচএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর (পিইসি) পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে অংশ নেবে। এতেই বোঝা যায়, এ বছর জেএসসি পরীক্ষা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
একই কথা বললেন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘জেডিসি পরীক্ষার বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। খুব শিগগির এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের জানান, চলতি বছরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হবে। যদি মনে হয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, তাহলে পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয় ছুটির মেয়াদ। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই ছুটি শেষে ১২ সেপ্টেম্বর খুলবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরের দিন থেকে খোলা হবে মেডিক্যাল, ডেন্টাল ও নার্সিংবিষয়ক সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সংশ্লিষ্টদের আগে থেকেই তাগিদ দিয়ে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুল খুলে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী, বিশেষ করে শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন মনোচিকিৎসকরা। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
আর শিক্ষামন্ত্রী বলে আসছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সব প্রস্তুতি তাদের আছে। করোনা পরিস্থিতি আর একটু নিয়ন্ত্রণে এলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হতে পারে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের ৪ কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ভাষ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত বেশি সময় বন্ধ থাকবে, ততই বাড়বে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা।