বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাসপাতাল সেবা নিশ্চিতে অভিনব উদ্যোগ

  •    
  • ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২১:৩৩

বর্ষা বলেন, ‘আমরা ফোন দেয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই রির্পোট চলে এসেছে। আমরা তো চাই অভিযোগবিহীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হোক। তবে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এটির কারণে আমাদের হররানি কমবে।’

জুলাই মাস। করোনা সংক্রমণ তখন উর্ধ্বমুখী। রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

রুহুল আমিন তার অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হলো ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে।

ওই ওয়ার্ড থেকে জানানো হলো এই ওয়ার্ডে ভর্তির সুযোগ নেই। নিয়ে যেতে বলা হলো আরেক ওয়ার্ডে। সেখানে গিয়েও ওয়ার্ডে ঠাঁই হলো না।

সময় যত যাচ্ছে মায়ের অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে। কমছে অক্সিজেন লেভেল। ঠিক তখনই রুহুলের চোখে পড়ে হাসপাতালের দেয়ালে লাগানো নোটিশ বোর্ড। তাতে লেখা সেবা না পেলে ফোন করুন। নিচে দেয়া আছে বেশ কয়েকটি মোবাইল নম্বর।

রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১ টা। একটি নম্বরে ফোন দিলেন রুহুল। ধরলেন হাসপাতালের পরিচালক জেনারেল শামীম ইয়াজদানী নিজেই। সমস্যা কী জানতে চাইলেন রুহুলের কাছে।

রুহুল আমিন বললেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরছি। মাকে ভর্তি করাতে পারছি না। পরিচালক বললেন, ‘আমি দেখছি বিষয়টা।’

এর পরপরই মাকে ভর্তির সুযোগ পেলেন মেডিসিন ওয়ার্ডে। শুধু তাই ই নয়। পরের দিন আবার খবরও নিলেন রোগী কেমন আছে? সকালে রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে পাঠানো হয় আইসিইউতে।

রুহুল বলেন, ‘আমি ভাবতেও পারিনি এভাবে একটি নম্বরে কল দিয়ে সমাধান হবে। আমি ভেবেছিলাম দেখি কী হয়। ধারণা করেছিলাম, তিনি হয়তো বলবেন, লিখিত অভিযোগ দিয়ে যান, পরে তদন্ত করে দেখব। তবে, তিনি সেটি করেননি। সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সরাসরি একজন পরিচালক যখন অভিযোগ নেন তখন সেবা না দিয়ে কোনো উপায় থাকে না।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলে রোগীদের সেবা বাড়াতে দেয়ালে দেয়ালে লাগানো হয়েছে অভিযোগ নম্বর। সেবা না পেলেই রোগীরা ফোন দিচ্ছেন সেই নম্বরে। এর ফলে অনেকেই তাৎক্ষণিক সমাধানও পাচ্ছেন।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার ওয়ার্ডের সামনে, বারান্দাসহ বিভিন্ন দেয়ালে নোটিশ টাঙানো হয়েছে মোবাইল নম্বর দিয়ে। সেখানে ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের নম্বর থেকে শুরু করে হাসপাতাল পরিচালকের নম্বরও দেয়া রয়েছে। অন্যদের ফোন দিয়ে সমাধান না পেলে পরিচালকের নম্বরে ফোন করার জন্য বলা হয়েছে।

রোগীর স্বজনরা বলছেন, এমন অভিযোগ সেল গঠনে তাদের সুবিধা হয়েছে। এখন সেবা পেতে ভোগান্তি হলেই কল দেয়া যায়। কোনো দালালের খপ্পরে পড়লে ফোন করে অভিযোগ করা যায়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সেবার মান বাড়াতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই অন্তত ৩০/৪০ টি অভিযোগ আসছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক সেবা দেয়ারও ব্যবস্থা করছেন তারা।

গত ৩ তারিখ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা করতে আসেন শিউলী বেগম। প্যাথলজি বিভাগের রির্পোট দেয়ার কেউ ছিল না। সেখানে ২/৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত তার মেয়ে ফারজানা আক্তার বর্ষা কল দেয় পরিচালকের নম্বরে। ফোন দেয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই তাদের হাতে দেয়া হয় রির্পোট।

বর্ষা বলেন, ‘আমরা ফোন দেয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই রির্পোট চলে এসেছে। আমরা তো চাই অভিযোগবিহীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হোক। তবে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এটির কারণে আমাদের হররানি কমবে।’

নাটোরের বড়াইগ্রাম থেকে কোমরের হাড় ভাঙা নিয়ে এসেছিলেন মনিরুল। কিন্তু এক্স-রে মেশিন পাচ্ছিলেন না। তার ভাই মো. সাব্বির ফোন দেন পরিচালকের নম্বরে। সেখানে কল দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসে এক্স-রে। তোলা হয় ছবি।

সাব্বির বলেন, ‘এখানে যে সেবা পাব ভাবতেই পারি নি। আগেও হাসপাতালে এসেছি। এখানে এভাবে সেবা দিবে আমার কল্পনাতেও ছিল না। এটি ভালো হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের মতো গ্রাম থেকে যারা যায় তারা অনেক কিছু বোঝে না। তাদের সেবা পেতেও ভোগান্তি হয়। কোনো কোনো সময় তারা দালালের খপ্পড়ে পড়ে। এত করে তাদের অর্থিক ক্ষতিও হয়। এটির মধ্যমে সেটা কমে আসবে।’

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমার অভিযোগ সেল চালু করেছি, সেবার মান বৃদ্ধি ও ভোগান্তি কামাতে। মূলত আগের যে অভিযোগ ছিল সেটি পুরোনো। এটির মাধ্যমে লিখে লিখে অভিযোগ সমাধানে অনেক সময় লাগত। কিন্তু এখন রোগীরা অনেক দ্রুত সমাধান পাচ্ছেন। সেবার মানও বাড়ছে। চারদিকে নম্বর ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে হাসপাতালের চিকিৎসার মান সম্পর্কে আমিও একটা পরিষ্কার ধারনা পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘এটি করোনাকালে অনেক ভূমিকা রেখেছে। অনেকই তখন আমাদের ফোন করেছে। আমরা তাদের সর্বোচ্চ দিয়েছি। পুরো হাসপাতলের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নম্বর দেয়া আছে। সেখানে কেউ যদি অভিযোগ করে সমাধান না পায়, তবে আমাকে অভিযোগ করে। আমি সমাধান দেই। এটি বেশ সাড়া ফেলেছে। এটির মাধ্যমে দিনে অন্তত ৩০/৪০টি সমস্যার সমাধান দিতে হচ্ছে। সেবা দিতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে।’

এ বিভাগের আরো খবর