সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, সারা দেশে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সশরীরে পাঠদান শুরু হবে স্কুলগুলোতে। এরই মধ্যে স্কুলগুলোতে শুরু হয়ে গেছে ধোয়ামোছার কাজ।
ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে জামালপুরে। বন্যার পানি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়ায় জেলায় শুরুর দিন থেকে স্কুল চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্কুল খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তায় হতাশ হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা বলছেন, বন্যার কারণে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সম্ভব না হলে বিকল্প পদ্ধতিতে যেন তার ব্যবস্থা করা হয়।
পাঠদানে সমস্যা হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জামালপুরের ১ হাজার ১৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বন্যার পানি ঢুকেছে ১৮৭টিতে। এর মধ্যে রয়েছে সরিষাবাড়ি উপজেলার ৭টি, মেলান্দহের ২৮টি, দেওয়ানগঞ্জের ১৫টি, ইসলামপুরের ৪২টি, বকশীগঞ্জের ১৭টি এবং মাদারগঞ্জ উপজেলার ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এসব স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৪০০।
জেলার ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি এলাকার ডেবরাইপ্যাচ এলাকায় মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি স্কুলটি এখনও পানির নিচে। স্কুলের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে হাঁটু সমান পানি। আবার অনেক শ্রেণিকক্ষে দেখা গেছে বন্যার পানিতে জমা বালির স্তূপ। এ ছাড়া বন্যার কারণে কিছু জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় রয়েছে যাতায়াতের অসুবিধা।
বন্যাকবলিত প্রায় প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলের একই অবস্থা বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এসব সমস্যার সমাধান না করে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলা অনিশ্চিত বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
ড্যাবরাইপ্যাচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ইলিয়াস নিউজবাংলাকে বলে, 'আঙ্গরে (আমাদের) স্কুলটা এহনকে বন্ধ। ১২ তারিখে খুলার কথা। এহন খুলব নাকি না খুলব, এইটার সম্ভাবনা নাই।
‘পানি একবার বাড়ে, আরেকবার কমে। এহনকে আমরা ছাত্র সবাই ঘরের মধ্যে বইয়ে আছি। আঙ্গরে ঘরের মধ্যে বসে থাকতে আর ভালো লাগে না। সরকারে এডা (একটা) ব্যবস্থা তো কইরে দিবো।'
চিনাডুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শরিফ বলে, ‘আমরা দুই বছর ধরে বসে আছি। স্কুলে যেতে পারি না। স্কুল ১২ তারিখে খুলব। স্কুলে পলি পড়ে থাকে। সাফ করতেই এক মাস লাগব।
‘এর কারণে যাইতে পারি না। আঙ্গরে মনডা আনচান করতাছে স্কুলে যাওয়ার লাগে।’
বন্যার পানির কারণে পাঠদান চালু করতে না পারলে সময় নষ্ট না করে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি অভিভাবকদের।
সাইফুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুল যে ১২ তারিখে খুলবে, স্কুলে যাব কীভাবে? বর্ষা আসেই। এহন তো স্কুলে যাওয়ার কোনো পদ্ধতি নাই।
‘এখন যদি আর কোনো প্রসেস থাকে সরকারের, তাহলে করে দিতে পারে। এটাই আমার সরকারের কাছে আকুল আবেদন।’
আরেক অভিভাবক আক্কাস আলী বলেন, ‘স্কুলে বর্তমানে পানি। পানিডে কমে গেলে আমরা শুনলাম যে, ১২ তারিখে খুলার কতা। এই ১২ তারিখে যদি স্কুলডা খুলে, তাইলে পুলাপানগুলে যেভাবেই হোক লেহাপড়া করতে পারব।
‘আর যদি না হয় তাইলে গরিব মাইনষের পুলাপান এগলে তো পড়া হবইনে। খালি ধনীগুলেই পড়ব। গরিব মাইনষের পুলাপান এগলে মূর্খ হব।’
১২ সেপ্টেম্বরে স্কুল খোলার বিষয়টি অনিশ্চিত জানিয়ে ডেবরাইপ্যাচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চারা যেহেতু ঘোষণা পাইছে যে, ১২ তারিখ থেকে আমাদের স্কুল খুলবে, তারা খুব আগ্রহী স্কুলে আসার জন্যে। কিন্তু এখন যেহেতু বন্যা, বাড়ি বাড়ি বন্যার পানি, স্কুলের শ্রেণিকক্ষেও পানি।
‘এখন পানিটা দ্রুত নিষ্কাশন হইলেই ইনশাল্লাহ আমরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চালু করব। তবে মনে হচ্ছে না ১২ তারিখের আগে পানি কমবে। আর পানি কমলেও এইগুলো পরিষ্কার করতেই অনেক দিন লাগবে।’
জামালপুরের মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘তড়িঘড়ি করে স্কুল খুললেই হবে না। বন্যার পরই নানা রকম রোগব্যাধি ছড়ায়।
‘তাই স্কুলগুলো ভালোমতো পরিষ্কার করে তারপর পাঠদান চালু করতে হবে, যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা না হয়।’
এসব বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। তাই আগামী ১২ তারিখের মধ্যে বিদ্যালয় পরিচালনার ব্যাপারে ইনশাল্লাহ কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া যদি বিদ্যালয় পরিচালনার ব্যাপারে অসুবিধা বা সমস্যার বোধ করি, তাহলে সে ক্ষেত্রে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
পরে দফায় দফায় বাড়ানো হয় ছুটির মেয়াদ। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়।