মসলা মাখানো আলুর টুকরাগুলো তিন কোনা করা ময়দার খোলসে যত্ন নিয়ে ভরছিল মুন্না। পাশে বাবা আলম মিয়া কাঁচা সে শিঙাড়া গরম তেলে ভাজার কাজ করছিলেন।
শিঙাড়া বানানোর সময় সকালের আলোর সঙ্গে মুন্নার মুখের হাসি মিশে একাকার হয়ে যায়। সকাল সকাল মুন্নার সে হাসির কারণ কী? জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, স্কুল খোলায় উচ্ছ্বসিত এ কিশোর। ক্লাসে যেতে তর সইছে না আর।
মাগুরা সদরের আঠারখাদা মোড়ে আলম মিয়ার ছোট্ট হোটেলটির বয়স কুড়ি বছর। এর একমাত্র বাবুর্চি আলম নিজেই। তার সহকারী কিংবা হোটেল বয় ছোট ছেলে মুন্না পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবার সঙ্গে হোটেলে আসে সে। এরপর সকালের পরোটা আর ডালভাজি বানাতে সহযোগিতা করে বাবাকে।
কাস্টমারকে খাবার দেয়া থেকে শুরু করে থালা-বাসন ধোয়া, পরোটা ভাজার কাজও করে সে।
মুন্নার বাবা আলম মিয়া বলেন, ‘দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেকে বসে থাকতে দেই নাই। হোটেলের কাজে লাগিই দিছি।
‘হোটেলের সব খাবার সে তৈরি করতে পারে। এমনকি ভালো তরকারিও রান্না করা শিখে গেছে মুন্না।’
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক স্কুলের অনলাইন ক্লাস মাঝেমধ্যে হয়। ছেলে ক্লাস করুক আর না করুক, মোবাইলে ক্লাস করার যে সফট (সফটওয়্যার) না কী কয়, তা শিখে গেছে। তাই সকালে ক্লাস থাকলি এই হোটেলের টেবিলে বসেই করে।’
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সশরীরে পাঠদান শুরু হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
এ নিয়ে মুন্নার বাবা বলেন, ‘স্কুল খুলবে শুনছি। এর আগেও কয়বার খোলার কথা শুনছিলাম। পরে খোলে নাই।
‘করোনা এহনও যায় নাই। তবু স্কুল খোলা দরকার। ছেলেটা সারা দিন আমার সঙ্গে হোটেল চালায়; খুব খারাপ লাগে। ওর মাথা আছে। ওরে পড়াশোনা করাইতে চাই।’
১১ বছরের মুন্না স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিকে পড়ে।
সে নিউজবাংলাকে বলে, ‘করোনার জন্যি তো স্কুল বন্দ (বন্ধ)। শাটডাউনের সময় বাবার সঙ্গে যে লোকটা কাজ করত, সে চলে গেল। তহন আমি বাবারে সাহায্য করা শুরু করি। এতে আমার বন্ধুরা প্রথমে কামলা বলে খ্যাপাত। এহন এসব কিছু মনে হয় না।
‘এবার স্কুল খুললি প্রতিদিন স্কুলি যাব। আগে ফাঁকি দিয়ে খেলা করতাম। এই দেড় বছরে উচিত শিক্ষা পাইছি। আর স্কুল কামাই দেবো না। এর সঙ্গে বাবাকে যতটা সাহায্য করা যায়। জানি বাবার কষ্ট হবে, তবু পড়াশোনা তো বন্ধ করা যাবিনে।’