বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে জমা ‘প্রত্যাশার চেয়ে কম’

  •    
  • ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২০:৩৭

বিএসইসির একজন নির্বাহী পরিচালক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দিকে আমরা এই ফান্ডের জন্য ২১ হাজার কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ অবণ্টিত অবস্থায় পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়ার পর তারা অনেকগুলো বিষয়ে স্পষ্ট করার পর আমরা আশা করছি এই তহবিলে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা জমা হতে পারে।’

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির অবণ্টিত মুনাফা দিয়ে যে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ গঠন করা হয়েছে, তাতে প্রত্যাশার চেয়ে কম টাকা পাওয়া গেছে।

৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তহবিলে জমা পড়েছে মোট ৩১০ কোটি টাকা। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও প্রায় সমপরিমাণ টাকা জমা পড়তে পারে বলে হিসাব করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

বিএসইসি কোম্পানিগুলোকে ৩১ আগস্টের মধ্যে অবণ্টিত বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ জমা দেয়ার নির্দেশ দিলেও সবাই জমা দেয়নি। কোম্পানিগুলো আরও ১৫ দিন সময় চেয়েছে এবং তাদেরকে সেই সময় দেয়া হয়েছে।

৩১ আগস্ট সব শেষ সময় বেঁধে দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত ২৪৩টি কোম্পানি তার হিসাব জমা দিয়েছে। বাকি আছে আরও ৮০টি কোম্পানি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার নথিপত্র অনুযায়ী নগদের বাইরে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৮৬ কোটি ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯১২ টাকা সমমূল্যের বোনাস শেয়ার পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। কোম্পানিগুলোর সবগুলো এখনও হিসাব দেয়া শেষ করতে পারেনি।

সবগুলো কোম্পানির কাছ থেকে হিসাব এলে শেষ পর্যন্ত অবণ্টিত লভ্যাংশের তহবিলের আকার ৫ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে মনে করছেন বিএসইসির একজন নির্বাহী পরিচালক।

অথচ গত ২৫ অক্টোবর বিএসইসি যে প্রাথমিক হিসাব করেছিল, সেখানে বোনাস শেয়ার ১৪ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের বোনাস শেয়ার পাওয়া যাবে বলে হিসাব কষেছিল। আর নগদ মিলিয়ে পাওয়ার আশা ছিল ২১ হাজার কোটি টাকার সমান।

তখন কেবল ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানির ৮ কোটি ৯১ হাজার ৮০২টি অবণ্টিত বোনাস শেয়ারের খোঁজ মিলেছিল।

এরপর কোম্পানিটি একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে। এই হিসাবে শেয়ারসংখ্যা হওয়ার কথা ২৬ কোটি ৭৩ লাখ ৩২ হাজার ৪০৬টি। কিন্তু জমা পড়েছে কেবল ৩৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭১২টি।

কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অবণ্টিত লভ্যাংশের বোনাস ও নগদ টাকা কেউ পেলে কোম্পানিকে জানাতে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর শেয়ারমালিকরা যোগাযোগ করলে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

একই ঘটনা ঘটেছে স্কয়ার ফার্মার ক্ষেত্রে। ২৫ অক্টোবরের তালিকা অনুযায়ী ২ কোটি ৯২ লাখ ৭ হাজার ৯৭২টি শেয়ার আসার কথা তহবিলে। আসেনি একটিও।

স্কয়ারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর শেয়ারমালিকরা এসে তাদের দাবি জানিয়েছেন আর যাচাই শেষে সেগুলো মালিকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

এভাবে প্রায় সব কটি কোম্পানি থেকেই প্রাথমিক হিসাবের চেয়ে কম টাকা ও শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে।

বিএসইসির একজন নির্বাহী পরিচালক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দিকে আমরা এই ফান্ডের জন্য ২১ হাজার কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ অবণ্টিত অবস্থায় পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়ার পর তারা অনেকগুলো বিষয়ে স্পষ্ট করার পর আমরা আশা করছি এই তহবিলে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা জমা হতে পারে।’

বোনাস শেয়ার দিয়ে কী করা হবে

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায়। এই তহবিল থেকে এখনও বিনিয়োগ শুরু করা হয়নি। যে পরিচালনা পর্ষদ এই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে, সেই পর্ষদ কেবল গঠন করা হয়েছে।

তহবিলের নামে একটি বিও হিসাব খোলা হয়েছে, সেখানে জমা পড়ছে বোনাস শেয়ারগুলো। তবে এই শেয়ার নিয়ে কী করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

তবে এই শেয়ার ঋণ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ব্রোকারেজ হাউস বা পুঁজিবাজার বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ হিসেবে দেয়া হবে।

বিএসইসির একজন নির্বাহী পরিচালক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো কোম্পানির যত শেয়ার থাকবে, তার মধ্যে একটি অংশ তিন মাসের জন্য ঋণ হিসেবে দেব আমরা। সেই কোম্পানি শেয়ার লেনদেন করবে। এর বিপরীতে কমিশন দেবে তহবিলকে। আর এই সময়ে যদি বোনাস শেয়ার দেয়া হয়, সেটিও তহবিলে জমা হবে।’

তহবিলের ভাবনা যেভাবে

নিয়মিত লেনদেন না করা বা দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থানের কারণে ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে যায়। এতে নগদ লভ্যাংশ ব্যাংক হিসাবে জমা হয় না। একই কারণে বিও হিসাব নবায়ন না করলে শেয়ার (স্টক) লভ্যাংশ জমা না হয়ে তা কোম্পানির কাছে ফেরত চলে যায়। কোম্পানি এগুলো সাসপেন্ডেড হিসাবে জমা দেখিয়ে আর্থিক বিবরণী তৈরি করে।

ভারতে এই ধরনের অবণ্টিত লভ্যাংশ ব্যবহার করে পুঁজিবাজারের জন্য ব্যবহার করা হয়। দেশেও এই অর্থ ব্যবহার করে কীভাবে পুঁজিবাজারকে উন্নত করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়। তখনই এই তহবিল গঠনের আলোচনা ওঠে। আর ২৭ জুন প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে এই তহবিল গঠন নিশ্চিত হয়।

তহবিল পরিচালনায় পর্ষদ কী করছে

এই তহবিল পরিচালনার জন্য গত ২২ আগস্ট ১০ সদস্যের পরিচালনা পর্যদ গঠন করা হয়েছে, যার চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন সাবেক মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান।

পরিচালনা পর্ষদে আরও আছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক তানজিলা দিপ্তী, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভুঁইয়া, চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ফজল বুলবুল, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সিসিবিএলের স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ তারেক এবং এ কে এম দেলোয়ার হোসেন ।

এই পর্ষদ এখন পর্যন্ত কেবল একটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে যে পরিমাণ অবণ্টিত লভ্যাংশ জমা পড়ার কথা পড়েছে, তার চেয়ে কম পড়ার বিষয়টি নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে।

সিদ্ধান্ত হয়েছে, শেয়ারধারীদেরকে লভ্যাংশ দিয়ে দেয়া হয়েছে বলে কোম্পানির পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়েছে, সেটি যাচাই করে দেখা হবে। এ জন্য নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

৪০ শতাংশ শেয়ারে বিনিয়োগ, ৫০ শতাংশে মার্জিন ঋণ

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই তহবিলের ৪০ শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ারে। ৫০ শতাংশ অর্থে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দেয়া হবে। আর ১০ শতাংশ অর্থ অতালিকাভুক্ত কোম্পানি বা সরকারি সিকিউরিটিজ, স্থায়ী আমানত ও বেমেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যাবে।

এই তহবিলের মার্জিন ঋণের সুদহার কত হবে, সেটি অবশ্য প্রজ্ঞাপনে বলা নেই।

এ বিভাগের আরো খবর