প্রেমের সম্পর্কের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানার কসবা গ্রামের আবু তাহের বিয়ের করেন পোশাককর্মী রোজিনাকে। তিন বছর পর তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যাশিশু। কিন্তু মেয়ের জন্মের সপ্তাহখানেক পর শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর সঙ্গে রোজিনার সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। শিশুকে নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে টঙ্গীতে বোনের বাসায় চলে আসেন তিনি।
পারিবারিক কলহের কারণে ৪০ দিনের শিশুকে দত্তক দেন রোজিনা। তাকে পেয়ে যেন সব কষ্ট ভুলে যান কুলসুম আক্তার। পরম মাতৃস্নেহে তাকে বড় করতে থাকেন তিনি। আদর করে শিশুটির নাম রাখেন তাহিদা।
এর পর কেটে গেছে প্রায় ৮ মাস। এত দিনে শিশুটি কুলসুমকে মা ভাবতে শুরু করেছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে দত্তক দেয়া শিশুটিকে ফেরত চেয়ে বসেন শিশুটির প্রকৃত মা-বাবা। কিন্তু কুলসুম তাকে ফেরত দিতে নারাজ।
পরে নিজের সন্তানকে আটকে রাখা হয়েছে বলে রোববার দুপুরে টঙ্গী পূর্ব থানায় অভিযোগ করেন শিশুটির মা রোজিনা। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ টঙ্গীর মরকুন এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
পালিত মা কুলসুমের কোল খালি করে রোজিনার কোলে ফিরিয়ে দেয়া হয় শিশু তাহিদাকে। এ সময় থানায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। সন্তান হারানোর শোকে কুলসুম থানায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই দৃশ্য দেখে চোখ ভিজে ওঠে অনেকের।
কুলসুম আক্তার জানান, দাম্পত্য কলহের কারণে অনেক আগেই স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। সে সংসারে তাদের কোনো সন্তান নেই। আট মাস আগে স্থানীয় লোকজন একটি কন্যাসন্তানের খবর দেয়। সে সময় ৪০ দিন বয়সের শিশুটিকে লিখিত চুক্তি করে দত্তক নেন তিনি।
তিনি বলেন, ভেবেছিলাম এই সন্তানকে বুকে আঁকড়ে ধরে জীবনের বাকি সময়টা পার করে দিব। এই সন্তান পাওয়ার পর থেকে বেশ সুখে-শান্তিতে ছিলাম। এখন আবার সন্তান হারা হলাম। প্রয়োজনে তিনি সন্তানের নামে অনেক সম্পত্তি লিখে দেবেন। তবুও শিশুটিকে যেন ফিরিয়ে দেয়া হয়।
অন্যদিকে শিশুটির প্রকৃত বাবা আবু তাহেরের নিকটাত্মীয় কামাল নিউজবাংলাকে জানান, সংসারে টানাপোড়েনে রোজিনা তার স্বামীকে না জানিয়ে ৪০ দিন বয়সের শিশুটিকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন কুলসুমের কাছে। এর কিছুদিন পর আবু তাহের সন্তানের খোঁজ চাইলে রোজিনা বলেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুটি মারা গেছে। তবে মাসখানেক আগে রোজিনা ও তাহেরের সম্পর্কের উন্নতি হয়। স্বামীকে সন্তান দত্তকের বিষয়টি খুলে বলেন রোজিনা।
টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন বলেন, উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে আনা হয়। আদালতের রায় ছাড়া দত্তক নেয়ার কোনো আইনি বৈধতা নেই। তাই আলোচনা করে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে শিশু তাহিদাকে তার প্রকৃত মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।