বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে পানিবন্দি ৩ লাখ মানুষ

  •    
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:৫১

পদ্মা ও যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মধ্যাঞ্চলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উত্তরের ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘটের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও কমেছে তিস্তা ও করতোয়ার পানি। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং ভারতের গজলডোবার সবকটি গেট খুলে দেয়ায় দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এতে দেশের উত্তর ও মধ্য অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৩ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। পানি বৃ্দ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। তলিয়ে গেছে শত শত একর ফসলি জমি।

গাইবান্ধা

জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে যাচ্ছে করতোয়া ও তিস্তার পানি।

গত এক সপ্তাহ ধরে গাইবান্ধার চার উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাটসহ ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন বানভাসীরা।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত অপারেটর নাসরিন ময়না জানান, ভারী বর্ষণ না হলেও কয়েক দিন ধরে উজান থেকে পানি ঢুকে পড়ছে গাইবান্ধার চার নদীতে। এতে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর করতোয়া ও তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

জেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে এরই মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি বন্দর, সৈয়দপুর, গোঘাট ও লঞ্চঘাটসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর, উড়িয়া, গজারিয়া ও এরেন্ডাবাড়িসহ আরও কিছু ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে।

তাছাড়া সাঘাটা উপজেলার বাঁশহাটা, চিনিরপটল, পবনতাইড়, হলদিয়া, পালপাড়া, চকপাড়া, থৈকরপাড়া, মুন্সিরহাটসহ বেশ কিছু এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্লাবিত হয়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলসহ শ্রীপুর, বেলকা, কাপাসিয়া, চণ্ডিপুর এবং তারাপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম।

জামালপুরে বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জনপদ

পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্রে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। হুমকির মুখে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। স্কুল, মসজিদসহ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে বহু সরকারি স্থাপনা।

বানভাসীদের অনেকেই তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। তাছাড়া এসব এলাকার চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট, ফসলি জমিসহ শত শত হেক্টর আউশের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

জেলার চার নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় বসবাসরত মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া বাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানির চাপ বাড়লেই বাঁধের ওই অংশগুলো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

সৈয়দপুর ঘাটে আশ্রয় নেয়া রাবেয়া বেওয়া বলেন, ‘পানি বাড়তিছে। ভয়ও বাড়তিছে। ঘরবাড়ি পানিত ডুবি গেল। কেউ দেখপের আলো না। এখন হামরা কোনটে যাই। কী খাই।’

ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া গ্রামের আমিনুর মিয়া বলেন, ‘ঘরবাড়ি ডুবতিছে। গরুবাছুর বাঁচাই, না নিজে বাঁচি। টংগত বসি বসি রাত কাটতিচে।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুরের মজিদ বলেন, ‘পানি যে হারে বাড়ছে, তাতে করে এবার বানের পানি সব নিয়ে যাবে। মানুষ না খেয়ে মরবে।’

নীলফামারী

নীলফামারীতে শনিবার সকাল ৯টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমতে থাকলেও ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন এলাকার লোকজন।

এর আগে শুক্রবার সকালে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।

ব্যারাজের ভাটিতে ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখুলি গ্রামে তিস্তার বাঁধে আশ্রিতরা জানান, ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ী গ্রামের গত রোববার রাতে তিস্তার দুই নম্বর স্পার বাঁধটির দেড় শ মিটার ভেঙে যায়। এ সময় পানিবন্দি হয়ে পড়ে ভেন্ডবাড়ীসহ ভাবনচুর, দক্ষিণ সোনাখুলি ও কুটিপাড়া গুচ্ছগ্রামের হাজারো পরিবার। পরিবার নিয়ে অনেকেই আশ্রয় নেন বাঁধসহ উঁচু স্থানে।

গত বুধবার থেকে পানি কমতে থাকলে স্বস্তি ফেরে পরিবারগুলোর মাঝে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

দক্ষিণ সোনাখুলি গ্রামের গৃহবধূ হালিমা বেগম বলেন, ‘এইবার দফায় দফায় নদীত পানি বাড়ে আর কমে। একটা বানের ধাক্কা সামলাইতে না সামলাইতে আরেকটা বান আইসে। এতে করি জমির সোগ আবাদ নষ্ট হইল। সামনের দিনোত হামরা খামো কী ভাববার পাচ্ছি না।’

ওই গ্রামের আবেদ আলী বলেন, ‘এই জীবনোত নয়বার ভিটা বদল করিনু। এইবার ভিটা না ভাঙিলেও নদীর বান (বাঁধ) ভাঙি চাইর একর আবাদি জমি নদীর পেটত গেইল।’

সিরাজগঞ্জ

গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় এভাবে অস্থায়ী ছাউনির নিচে আশ্রয় নিয়েছে এক দম্পতি

এতে জেলার পাঁচ উপজেলার চরাঞ্চলের ২৮টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, যমুনা নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। এতে জেলার অনেক স্থানেই বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম নিউজবাংলাকে জানান, বন্যাকবলিত উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বরাত দিয়ে, এরই মধ্যে বন্যার্তদের জন্য ১৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। ৫টি উপজেলায় ১২৫ টন ক্ষয়রাতি চাল এবং ৫ লাখ নগদ টাকা সাহায্যও দেয়া হয়েছে।

জামালপুর

জামালপুরের ছয়টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নের ১৬৯টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হলেও অনেকেই খোলা আকাশের নিচে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে শনিবার দুপুরে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতি

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। এ ছাড়া যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়েছে ৬৫টি পরিবার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সাখাওয়াৎ ইকরাম জানান, বন্যার পানিতে জেলার ৩ হাজার ৬২৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে রোপা আমন ধান ৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ৪৫ হেক্টর এবং বিভিন্ন শাকসবজি ৪৮ হেক্টর রয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, বন্যার্তদের মাঝে এরই মধ্যে ১১২ টন চাল, ৩৪ লাখ টাকা এবং এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

ফরিদপুর

পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ফরিদপুর জেলার চারটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন।

জেলা সদর, চরভদ্রাসন, সদরপুর, ভাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার বহু গ্রামে ফসলি জমি, রাস্তা, নিচু এলাকার বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানি ও গবাদিপশুর খাদ্যসংকট।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানিবন্দি হয়ে পড়ায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের স্থানীয়দের

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহি জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক নদীভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, পানিবন্দি মানুষের মাঝে খাদ্যসহায়তা দেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে। এ ছাড়া খাদ্যের পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ

মুন্সিগঞ্জের ভাগ্যকূল পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার আর মাওয়া পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে পদ্মা নদীতীরবর্তী শ্রীনগর, লৌহজং, টঙ্গীবাড়ী ও মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

এদিকে, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার গাড়ুরগাও, পূর্ব হাসাইল, চৌসার, বানারী, মান্দ্রা, আটিগাওসহ প্রায় ৩০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সহকারী জয়নাল আবেদীন জানান, নদীতীরবর্তী নিচু এলাকাগুলোতে পানি ঢুকলেও রাস্তাঘাট এখনও পানির ওপরে রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর