নির্বাচনি আমেজ নেই, এ নিয়ে আগ্রহও নেই সাধারণের। ভোট দেয়ার জন্য কোথাও কোথাও বাড়ি থেকে ডেকে আনতে হয়েছে ভোটারদের।
এমনই নিরুত্তাপ পরিবেশে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের ভোট শেষে শুরু হয়েছে গণনাপর্ব।
দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের বেশির ভাগ কেন্দ্রে দিনভর দেখা গেছে ভোটার খরা।
সিলেট জেলায় ভোররাত থেকে ছিল বৃষ্টি। তবে সকাল ৭টা নাগাদ তা থেমে যায়। সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পর প্রায় সব কেন্দ্রেই চার-পাঁচজন করে ভোটার দেখা যায়। সে সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন, হয়তো বৃষ্টির কারণে ভোটাররা আসতে দেরি করছেন; বেলা বাড়লে ভোটার বাড়বে।
তবে, বিকেল ৪টায় ভোট শেষ হওয়া অবধি কোনো কেন্দ্রে দেখা যায়নি ভোটারদের সারি কিংবা কোনো জটলা।
দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জে দিনভর ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। সে তুলনায় বালাগঞ্জে ভোটারদের আনাগোনা দেখা গেছে কিছুটা বেশি।
দক্ষিণ সুরমার কুচাই ইউনিয়নের জান আলী শাহ কেন্দ্রে ভোটার না আসায় নির্ধারিত সময়ে ভোট শুরু হয়নি। ৮টা ১০ মিনিটে এজেন্টরা বের হয়ে গিয়ে একজন ভোটারকে ডেকে এনে ভোট শুরু করেন।
প্রায় আধা ঘণ্টা এই কেন্দ্রে বসে থেকেও ভোটার উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি।
সকাল ৯টায় ইছরাব আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রও দেখা যায় একেবারে ফাঁকা। মাঝেমধ্যে একজন-দুজন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন।
সকাল ১০টায় পশ্চিমভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন নারী ভোটার আছেন। পুরুষ বুথ প্রায় ফাঁকা।
সেখানে ভোট দিতে যাওয়া গৃহবধূ সাহেলা বেগম বলেন, ‘বাড়ির পুরুষরা সকালেই কাজে চলে গেছেন। ভোট দিতে আসেননি। আমাদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসছে।’
শ্রীরামপুর বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সেন্টার কমিটির দায়িত্বে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য তাহমিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘এই ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ নেই। তবু আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের আনার চেষ্টা করছি।’
একই চিত্র ছিল ফেঞ্চুগঞ্জের বিভিন্ন কেন্দ্রের।
বালাগঞ্জে আওয়ামী লীগের কর্মীদের বেশ তৎপর দেখা গেছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। তবে, অন্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের তেমন দেখা যায়নি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী এমদাদুল ইসলাম ভোটার খরার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনও আমরা পুরো হিসাব পাইনি। তবে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্যে ধারণা করছি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট প্রয়োগ হয়েছে।
‘আমরা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছি। কোথাও কোনো গোলযোগ হয়নি। শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। তারপরও কেন মানুষ ভোটে আসেননি তা বলতে পারব না।’
ভোট নিয়ে অন্য প্রার্থীদের অভিযোগ না থাকলেও ইভিএমের ত্রুটির কারণে সকালে ভোট দিতে পারেননি জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক।
দক্ষিণ সুরমার মোঘলাবাজার এলাকার রেবতি রমণ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টার দিকে তিনি ভোট দিতে যান। বুথ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভোট দিতে পারিনি। নির্বাচন কর্মকর্তারা বললেন, ইভিএমে আমার নাম ও ভোটার নম্বর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বালাগঞ্জের কিছু কেন্দ্রে তার এজেন্টদের হুমকিধমকি দেয়া হয়েছে।
পরে দুপুর ৩টা ৫০ মিনিটে রেবতি রমণ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন তিনি।
ইভিএমের এই ত্রুটির বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা এমদাদুল বলেন, ‘ওই প্রার্থী হবিগঞ্জের ভোটার ছিলেন। সম্প্রতি তিনি হবিগঞ্জ থেকে এখানে ভোট নিয়ে এসেছেন। তফসিল ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় তার ভোটটি এখানকার তালিকায় আপডেট হয়নি।
‘তবে, সকালের ঘটনার পরই আমি নির্বাচন কমিশনে কথা বলেছি। দ্রুত তার ভোটার নাম্বার এখানে আপডেট করা হয়েছে।’
এবারই প্রথম সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। ভিড় না থাকায় ও মেশিনে ভোট হওয়ায় কম সময়েই ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন বলে সন্তুষ্ট ভোটাররা।
সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘খুবই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোথাও কোনো ঝামেলা হয়নি।’
জাপা প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি কিসের ভিত্তিতে অভিযোগ করেছেন জানি না। আমরা এমন কোনো অভিযোগ পাইনি।’
নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ভোট দিয়েছেন দক্ষিণ সুরমার কামালবাজার এলাকার ধরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। বুথ থেকে বের হয়ে তিনি বলেন, নৌকার জয় সুনিশ্চিত। ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই হচ্ছে।
এই উপজেলারই দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে ভোট দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী।
ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি জানিয়ে তিনি বলেন, ইভিএমের কারণে ভোটারদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। ভোটার ও নির্বাচনি কর্মকর্তাদের ইভিএমের বিষয়ে আগেই প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন ছিল।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে তিন উপজেলায় ভোট দেয়ার কথা ৩ লাখ ৫২ হাজার মানুষের। ১৪৯টি কেন্দ্রে ইভিএমে হয়েছে ভোট।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ১১ মার্চ সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। এরপর ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।