কুমিল্লা নগরীর শান্ত ভোর মুহূর্তেই পরিণত হচ্ছে ছিনতাই আতঙ্কে। শহর পুরোপুরি ঘুম থেকে জাগার আগেই সকালের পথচারী ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা পড়ছেন ছিনতাইকারীদের খপ্পরে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোরের ফাঁকা সড়ককে টার্গেট করছে ছিনতাইকারীরা। মোটরসাইকেলে এসে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মুহূর্তেই লুটে নিচ্ছে সর্বস্ব। কখনো কখনো তারা টার্গেট করা ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহতও করছে। এতে নগরবাসীর মধ্যে তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে নগরীর কাপ্তান বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. মঈনুল ইসলাম ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। পথে একটি সিএনজিতে উঠতেই তিনি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। সিএনজির ভেতরে থাকা দুই ব্যক্তি ছুরি ধরে মঈনুলের কাছ থেকে নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় এবং আঘাত করে আহত করে। থানায় গেলেও আশানুরূপ সহযোগিতা পাননি তিনি। শুধু একটি মোবাইল ফোন হারানোর সাধারণ ডায়েরি করতে বলা হয়। এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো ছিনতাইকারীরা ধরা পড়েনি।
দেড় মাস আগে কক্সবাজার ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একইভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হন কালীপদ দেবনাথ ও তার বন্ধু পলাশ দে। সালাউদ্দিন মোড়ে অস্ত্রের মুখে তাদের কাছ থেকেও মোবাইল ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। থানায় অভিযোগ করা হলেও সেই চক্রও এখনো ধরা পড়েনি।
গত কয়েক মাস ধরে নগরীতে ভোর হলেই এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। থানায় ও গণমাধ্যমে এসব বিষয়ে নিয়মিত মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ আসছে। তবে অনেকেই ঝামেলা এড়াতে ঘটনাগুলো গোপন রাখছেন।
নগরীর ঠাকুরপাড়া বিসিক এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, ভোর হলেই ঠাকুরপাড়া ও রানীরবাজার এলাকার বিভিন্ন মোড়ে ছিনতাইকারীরা ওৎ পেতে থাকে। রিকশায় বা হেঁটে যাতায়াতকারী কাউকে দেখলেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় তারা।
সম্প্রতি পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোববার রাত সোয়া ৩টার দিকে মোটরসাইকেলে আসা তিন ছিনতাইকারী এক অটো রিকশা যাত্রীর মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে।
৭ আগস্ট ভোরে টমছম ব্রিজ সংলগ্ন কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার পাশে এক মাদ্রাসার শিক্ষক ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। দুর্বৃত্তরা তার কাছ থেকেও নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এর আগে, ৪ আগস্ট ভোরে শাসনগাছা এলাকায় চান্দিনার বাসিন্দা ইব্রাহীম একইভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে নগরীতে কুড়িটির বেশি ছিনতাইকারী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই তারা ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে।
এদিকে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরার বেশিরভাগই অকার্যকর। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এসব ক্যামেরা মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম স্বীকার করেছেন- নগরীতে ছিনতাই বেড়েছে এবং ছিনতাইকারী ধরা পড়েছেও। তিনি জানান, গত এক বছরে ৪০ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য, গাড়ি ও কার্যকর সিসিটিভি না থাকায় টহল জোরদার করা যাচ্ছে না। লজিস্টিক সহায়তা বাড়ানো গেলে ছিনতাই প্রতিরোধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হতো।