আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যাবে বলে আশা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
চাঁদপুর সদরে শুক্রবার দুপুরে মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘গত সভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বর্ধিত করেছিলাম ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আশা করছি ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারবো।’
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা আবারও বসবো। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল নেয়। আমরা উপচার্যদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা বলেছেন অন্তত সকল শিক্ষার্থীরা যদি প্রথম ডোজ টিকা নিতে পারে তাহলে ভালো হয়।
‘সেজন্য আমরা একটা তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম অক্টোবরের মাঝামাঝি। এখন তাদের সঙ্গে আবারও কথা বলবো। ওনারা যদি অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে খুলতে রাজি হন কিংবা ভিন্ন কোনো তারিখ নির্ধারণ করেন সেটি ওনাদের বিষয়।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আগামী ৫ সেপ্টেম্বর আমাদের আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা রয়েছে। আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। স্কুল খুলে দেয়ার পরে দৈনিক বাধ্যতামূলক প্রতিবেদন প্রেরণের বিষয় রয়েছে। যেন কঠোরভাবে মনিটরিং করতি পারি, যেন স্বাস্থ্যবিধি সকলে মেনে চলে স্কুলগুলোতে।’
বেশিরভাগ শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আগে তো বলেছিলেন ১৮ বছরের বেশি মানুষদের টিকাদানের ব্যবস্থার কথা। এখন ১২ বছরের উপরে যারা আছে, তাদেরকেও টিকা দেয়ার কাজ শুরু করতে। কাজেই যেই টিকা তাদের দেয়ার মত, তেমন টিকা সরকার নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে। পর্যায়ক্রমে তা দেয়া হবে।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এ সময় সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘শুধু এককভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় এটি একক ভাবে নিশ্চিত করতে পারবে না। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের পাশাপাশি প্রশাসনসহ সকলের সহায়তা কামনা করছি।’
দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে প্রায় ১৭ মাস বন্ধ ছিল, তার সুফল আমরা পেয়েছি। আমাদের দেশে সংক্রমণ সেইভাবে বাড়েনি। তবে, অন্য দিকে আমাদের শারীরিক, মানসিক সমস্যাও হয়েছে। সকল দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেই সিদ্ধান্তই আমরা এখন নিচ্ছি সংক্রমণের হার কমে যাওয়ায়।’
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ঘোষণা ছিল এসএসসি পরীক্ষা হবে মধ্য নভেম্বরে এবং এইচএসসি পরীক্ষা হবে ডিসেম্বরের গোড়ায়। সেই সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা যেই অ্যাসাইনমেন্ট দিচ্ছি পরীক্ষার জন্য কীভাবে তৈরি হবে, অ্যাসাইনমেন্ট করলেই পরীক্ষার প্রস্তুতি হয়ে যাবে। পরীক্ষা হওয়া নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই ইনশাআল্লাহ।’
বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে বৃহস্পতিবার রাতেও ১২ তারিখ স্কুল খুলে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। আগামী দিনে আরও কমবে। তাই ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ছুটি রয়েছে তা আর বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।’
‘এর মধ্যে বড় কোনো সমস্যা না হলে আমরা ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারব। তখন সঠিক মনিটরিংও নিশ্চিত করা হবে।’
এর আগে যত দ্রুত সম্ভব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের দ্বিতীয় সেশনে বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কুলের ছেলে-মেয়েদের (নিয়ে) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কতগুলো নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা মেনেই টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি, যার জন্য কিছু ফাইজারের টিকা ইতিমধ্যে এসে পৌঁছেছে; আরও পৌঁছাবে। মডার্নার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। অন্যান্য টিকাও আসছে।’
দেশে করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয় ছুটির মেয়াদ। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।