বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কার প্রয়োজনে চারটি সেতু!

  •    
  • ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:৪৫

পাঁচ মিনিটের রাস্তা অন্য দিক দিয়ে ঘুরে যেতে চার ঘণ্টা সময় লাগে। স্কুল-কলেজ খোলা থাকার সময়ে প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। এ ছাড়া রাস্তা না থাকার কারণে অসংখ্য বিয়ে ভেঙে গেছে। বিবাহযোগ্য ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিন্তিত অনেক পরিবার।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বিলের মাঝখানে চারটি সেতু দাঁড়িয়ে আছে। ১৫ বছর আগে নির্মাণ হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো কাজেই আসছে না সেতুগুলো। বর্ষায় পানি সেতুগুলো ছুঁইছুঁই করে আর শুকনা মৌসুমে সেতুতে উঠতে লাগে মই।

উপজেলার নড়াইল ইউনিয়নের বিলে সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ইউনিয়নটির শিবধরা বিল ও ধলিকুড়ি বিলের মাঝখান দিয়ে পূর্ব নড়াইল থেকে কাওয়ালিজানের মধ্যে যোগাযোগ ও চলাচল সহজ করার জন্য নির্মিত হয়েছিল। সেতু নির্মাণের পরও বছরের পর বছর এভাবে দুর্ভোগ পোহানোর কারণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তবে এবার রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন ২০০৬ সালের মার্চ মাসে সেতুগুলো নির্মাণ করে। এসব সেতুর একটি ৬৩ ফুট ও বাকি তিনটির প্রতিটিই ৪৫ ফুট দীর্ঘ। নির্মাণের মাত্র এক বছরের মধ্যে পানির তোড়ে রাস্তার মাটি সরে যায়। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে দুর্ভোগ।

স্থানীয়রা জানান, নড়াইল ইউনিয়নের পূর্ব নড়াইল, কালিয়ানিকান্দা গ্রামসহ চরবাঙ্গাইল্যা, গোপীনগর, থৈইল্যাপাড়া, মাছাইল, কুমুরিয়া, খালপাড় ও আশপাশের এলাকার কয়েক হাজার মানুষ এই সেতুগুলোর মাধ্যমেই গ্রাম উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে ফলাফল হয়েছে উল্টো।

পাঁচ মিনিটের রাস্তা অন্য দিক দিয়ে ঘুরে যেতে চার ঘণ্টা সময় লাগে। স্কুল-কলেজ খোলা থাকার সময়ে প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। এ ছাড়া রাস্তা না থাকার কারণে অসংখ্য বিয়ে ভেঙে গেছে। বিবাহযোগ্য ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিন্তিত অনেক পরিবার।

পূর্ব নড়াইল গ্রামের হামিদুর রহমান ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, সেতু নির্মাণের আগে রাস্তা কেন নির্মাণ করা হলো না? উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে দুর্ভোগে ফেলার কোনো মানে হয় না। সেতু নির্মাণের নামে শুধু টাকাগুলো অপচয় করা হয়েছে।

একই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ফজলুল হক ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলেন, ‘আমরার ভালার (ভালোর) লাইগ্যা সেতু বানাইছে না। ট্যাহা খরচ করা লাগব, তাই হুদাই বানায়্যা ট্যাহা (টাকা) খরচ করছে।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আইজ পর্যন্ত এই রাস্তায় কেউ এক কোদাল মাটি ফালছে না। অহন আমাগর গুরুত্ব নাই। ভোটের আগে ঠিকই মাথা আতায়্যা ভোট চাইব। তখন কে কিরুম উন্নয়ন করছে জিগায়্যাম। বুইঝ্যা-হুইন্যা ব্যালটে ছিল মারবাম।’

কালিয়ানিকান্দা গ্রামের কৃষক আহম্মদ আলী বলেন, ‘ধানসহ অন্যান্য ফসল বাড়িতে আনার জন্য সেতুর সড়কটি আমরা ব্যবহার করি। শুকনা মৌসুমে কোনো রকমে আনতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে আনা যায় না। কারণ সেতুতে মই দিয়ে উঠতেও কষ্ট হয়। সামান্য বৃষ্টিতে বন্যা হয়। ফলে নৌকা ব্যবহার করি। খুব দ্রুত রাস্তাটি মেরামত করা প্রয়োজন।’

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ড ভিশন ময়মনসিংহের এরিয়া ম্যানেজার রাজু উইলিয়াম রোজারিও বলেন, ‘২০০৬ সালের মার্চ মাসে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করেছিলাম। তবে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ বা সংস্থার করার কথা ছিল জনপ্রতিনিধিদের। তারা কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় সেতুগুলো কারও কাজে আসেনি।’

সেতুগুলো নির্মিত হয়েছিল নড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নবী হোসেনের সময়ে। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই রাস্তাটি দিয়েই কয়েক হাজার মানুষকে ইউনিয়ন পরিষদে আসতে হয়। সেতুগুলো নির্মিত হওয়ার সময় রাস্তায় মাটি ফেলে চলাচলের উপযোগী করেছিলাম। এরপর থেকে কেউ এ রাস্তায় মাটি দেয়নি। এমতাবস্থায় দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘রাস্তাটির গুরুত্ব ও স্থানীয়দের দুর্ভোগের বিষয়টি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। আশা করছি, তারা উদ্যোগ নেবেন।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী দুই মাসের মধ্যে রাস্তা থেকে পানি কমে যাবে। ফলে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করব। ফলে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ আর থাকবে না।’

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু বিলের মাঝখানে সেতুগুলো নির্মিত হয়েছে, সেহেতু সাধারণভাবে রাস্তা করলে পানির তোড়ে আবারও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাবমারসিবল রাস্তা করলে অনেক টেকসই হবে। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দ্রুত একটি প্রস্তাব পাঠাব।’

এ বিভাগের আরো খবর