উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির কারণে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। গত কয়েক দিন থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জামালপুরের ১৩টি ইউনিয়নের হাজারো মানুষ।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছে, যমুনা নদীর পানি দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বাড়িঘরে পানি ওঠায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ফসলের মাঠ, উঁচু রাস্তা ও বাজারের পাশে। তবে এখনো ফাঁকা রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো।
বন্যাদুর্গত ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের ডেবারইপ্যাচ এলাকার আমিন মিয়া বলেন, ‘বন্যা আইলেই সবার আগে আমার ঘরত পানি উঠে। এ্যার জন্যে সবার আগে আমারে ঘর ছাড়ন লাগে। এহন এডা ক্ষেতে আশ্রয় নিছি। এরপর পানি বাড়লে রাস্তাত যাওন লাগবো। কিছু চাল-ডাল সাহায্য পাইছি। এইটুক দিয়ে কতদিন চলে কন?’
জামালপুর ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৩০৫ জন। তবে বন্যার কারণে গৃহহীন ব্যক্তির সঠিক সংখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ৩৫ টন চাল এবং ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। এরই মধ্যে দেওয়ানগঞ্জে ৪২টি এবং ইসলামপুরে ১৪টি পরিবারের মাঝে সরকারি সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। বাকি সহায়তা পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
বাড়িঘরে পানি ওঠায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ফসলের মাঠ ও উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা কবলিতরা। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্তের তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। তাই আরও বরাদ্দের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে জেলায় পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। এরই মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়কের ৩০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙনের শঙ্কায় দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দবাড়ি সড়ক, বাহাদুরাবাদ নৌ-থানা, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার রাস্তাঘাট, একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য স্থাপনা।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যমুনা নদীর পানি আগামী মাসের ৪ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যমুনার পানি সর্বোচ্চ ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, গতবারের মতো ভয়াবহ বন্যা এবার হবে না।’
তিনি আরও জানান, ‘বন্যার কারণে সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব ভাঙন প্রতিরোধে এরই মধ্যে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’