নাটোরের নলডাঙ্গায় তিন শতাধিক বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীর ভাতার টাকা ভুল বিকাশ নম্বরে পাঠানো হয়েছে। মোবাইল নাম্বার ভুলের কারণে গত মে মাসে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতার টাকা হাতে পাননি তারা।
টাকা পেতে প্রায় প্রতিদিনই সমাজসেবা কার্যালয়ে ধর্ণা দিচ্ছেন সুবিধাভোগীরা। তবে টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে কোনো সমাধান দিতে পারেননি সমাজসেবা কার্যালয়ের স্থানীয় কর্মকর্তারা।
নিজেদের ভুলের বিষয়টিও মানতে নারাজ সমাজসেবা কর্মকর্তা ও বিকাশ এজেন্ট। তারা পরপস্পরকে দোষারোপ করছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সামনে সোমবার বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, অনেক বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী টাকা না পাওয়ার কারণ জানতে এসেছেন। তবে টাকা ফেরত পাবেন কি না তার সদুত্তর দিতে পারছেন না কেউ।
উপজেলার বিলজোয়ানী গ্রামের প্রবীণ সাহেব আলী বলেন, ‘আগে ভাতার ট্যাকা ব্যাংকে দেওয়া হতো, সেটাই ভালো আছিল। এখন ডিজিট্যাল কর্যাতে অসুবিধে হচ্চে। আমাদের অনেকেরই মোবাইল ফোন নেই, তাই অন্যজনের সাহায্য লিতে হয়।
‘সেই জন্যই ট্যাকা তুলে ফাঁকি দিচ্ছে মুনে হয়। আমার ট্যাকা যে কার কাছে চল্যা গেল, বুছতে পারিচ্ছি না। ট্যাকা পাব কি না তাও বুঝিচ্ছি না। এই ট্যাকা না পেলে চলব্যো কী কইরে?’
একই উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামের ফুলজান বেগম বিধবা ভাতার টাকার জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন তার ভাতার টাকা আরেকজনের বিকাশ নম্বরে চলে গেছে। তিনি পরে সেই বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিলে টাকা পাননি বলে জানান সেই ব্যক্তি।
ফুলজান বেগম বলেন, ‘আমার বিধবা ভাতার ৪ হাজার ৫০০ ট্যাকা না পেয়ে যেই বিকাশ নম্বরে ট্যাকা গেছে সেই নম্বরে কল করি। এক লোক ফোন ধরে ট্যাকার কথা অস্বীকার করে।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন জানান, নলডাঙ্গায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ১৩৪ জন। এর মধ্যে সাড়ে তিন শর মতো ভাতাভোগীর ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ভুল নম্বরে চলে গেছে।
তার দাবি, নম্বর ভুলের দায় সম্পূর্ণ বিকাশ এজেন্ট কর্তৃপক্ষের। মাঠপর্যায়ে তাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তারা ঠিকমতো করেননি। মাঠপর্যায়ে অদক্ষতার কারণেই এত বড় ভুল হয়েছে।
তিনি জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নাটোর জেলার বিকাশ এজেন্ট মিজানুর রহমানের দাবি, সম্পূর্ণ নম্বর ভুল অথবা ডিজিট ভুলের দায় স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের লোকজনের। এখানে তাদের কোনো ভুল নেই। সমাজসেবা কার্যালয় তাদের যে নম্বর দিয়েছে তারা সেই বিকাশ অ্যাকাউন্টগুলোই আপডেট করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কেন এত বড় একটা ভুল হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টেকনিক্যাল কোনো ভুল হয়ে থাকলে তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। কারও অবহেলার প্রমাণ পেলে তারও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সমাধানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভুল নম্বরে চলে যাওয়া টাকা ফেরত আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথা বলা হচ্ছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’