বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নতুন অ্যাকর্ডে তীব্র আপত্তি বিজিএমইএর

  •    
  • ২৯ আগস্ট, ২০২১ ২৩:২৭

‘আন্তর্জাতিক অ্যাকর্ড এর জারি করা ২৫ আগস্টের প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি অনেকের মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, যা এই শিল্পের অংশীজনদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। এই বিজ্ঞপ্তিটিকে একটি স্বাধীন সংস্থাকে অবমাননা করার প্রয়াস হিসেবে দেখা যেতে পারে; যে সংস্থাটিকে কিনা উপরোক্ত চুক্তিবদ্ধ পার্টিগুলো (আন্তর্জাতিক অ্যাকর্ড ফাউন্ডেশন) নিয়ন্ত্রণ অথবা তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা রাখে না।’

বাংলাদেশে পোশাক খাতের নিরাপত্তা ইস্যুতে আবারও কাজ শুরু করতে অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি বাংলাদেশের (অ্যাকর্ড) ঘোষণাকে বিভ্রান্তিকর মনে করছে বিজিএমইএ।

সরকারের অনুমোদন নিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিলের (আরএসসি) সঙ্গে নতুন অ্যাকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আগের অ্যাকার্ডের ধারাবাহিকতায় রিটেইল কোম্পানি এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মধ্যে যে নতুন চুক্তি হয়েছে, তা নিয়ে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ।

সংগঠনটি পরিস্কারভাবে বলেছে, আরএসসি ছাড়া অন্য কারো বাংলাদেশে কাজ করার কোনো অধিকার নেই। আরএসসির সঙ্গে নতুন চুক্তির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই তারা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে কাজ করতে পারবে না।

আরসিসি ছাড়া কারও কোনো কথা পোশাক শিল্পমালিকরা শুনবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

রোববার নতুন অ্যাকর্ড ইস্যুতে বিজিএমইএ এক বিবৃতিতে তাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অ্যাকোর্ড এর জারি করা ২৫ আগস্টের প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি অনেকের মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, যা এই শিল্পের অংশীজনদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে।

‘এই বিজ্ঞপ্তিটিকে একটি স্বাধীন সংস্থাকে অবমাননা করার প্রয়াস হিসেবে দেখা যেতে পারে; যে সংস্থাটিকে কিনা উপরোক্ত চুক্তিবদ্ধ পার্টিগুলো (আন্তর্জাতিক অ্যাকর্ড ফাউন্ডেশন) নিয়ন্ত্রণ অথবা তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা রাখে না।

‘বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অ্যাকর্ড চুক্তিটি স্বাধীন জাতীয় ত্রি-পক্ষীয় আরএমজি সাসটেইনেবল কাউন্সিল (আরএসসি) দ্বারা বাস্তবায়িত হচ্ছে-এ ঘোষণাটি বিভ্রান্তিকর।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তত্ত্বাবধান ও অনুমোদনক্রমে সরকারের অনুমতি নিয়ে একটি স্বাধীন, অলাভজনক সংস্থা হিসেবে অ্যাকর্ড এর কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করার জন্য আরএসসি গঠিত হয়েছিল।

২০২০ সালের ৩১ মে অ্যাকর্ড এর কার্যক্রম শেষ হয়। পরে আরএসসি ১ জুন থেকে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা সামগ্রিকভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করে।

আরএসসি এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, একটি অভিন্ন ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ প্রণয়নের মাধ্যমে সাধারণ নিরাপত্তা প্লাটফর্ম হিসেবে পোশাক কারখানাগুলোর জন্য একটি টেকসই পরিবেশ সৃষ্টি করা, শিল্পের অর্জনগুলো ধরে রাখা এবং সেইসঙ্গে নিরাপত্তা কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রাখার জন্য কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন নিশ্চিত করা।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান

নিরাপত্তা বিষয়গুলোতে কারখানার কোনো প্রকার শিথিলতা অথবা এ বিষয়ে কারখানাকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘যদিও সার্টিফিকেশন প্রদানের বিষয়ে আরএসসি আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জনে পিছিয়ে আছে, তবে এ পরিস্থিতি উত্তরণে আরএসসি সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সকল স্টেকহোল্ডারদের সমান প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আরএসসি গঠিত হয়, যা একটি স্বাধীন প্লাটফর্ম। পূর্বের অ্যাকর্ড ২০১৩ এর প্রটোকলগুলো আরএসসিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এ সকল পদক্ষেপের মাধ্যমে আরএসসি তার যোগ্যতা ও কার্যকারিতার প্রমাণ রেখেছে।‘

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আরএসসি বোর্ড শুধুমাত্র তার স্টেকহোল্ডারদের কাছেই জবাবদিহি করতে বাধ্য। এটি একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান, যা বোর্ডের সকলের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করে, যেখানে একটি বা দুটি গ্রুপ কোনোভাবেই এর কার্যক্রম প্রভাবিত করতে পারে না। আরএসসি তার সার্বিক কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য। কারণ, সরকার আমাদেরকে তৈরি পোশাক খাতে কারখানার নিরাপত্তা কমপ্লায়েন্স এবং অভিযোগ পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে।’

বাংলাদেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী আইএলও ও ইইউ আরএসসি গঠনের শুরু থেকেই তাদের অনুমোদন দিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

‘পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের পোশাক খাতে আরএসসি ছাড়া অন্য কোনো সংস্থার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কাজ করার অনুমোদন নেই। পূর্বের স্টিচিং বাংলাদেশ অ্যাকোর্ড ফাউন্ডেশন এবং প্রস্তাবিত ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফর হেলথ অ্যান্ড সেফটি ইন দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি ফাউন্ডেশন, এ দুটি সংস্থার সঙ্গে আরএসসির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সংস্থা দুটি বাংলাদেশ সরকাররের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে কোনো কাজ করতে পারবে না।

‘অধিকন্তু, দেশের বাইরে স্বাক্ষরিত যে কোন চুক্তিতে যদি এমন কোন ধারা বা উপধারা থাকে, যা কি না দেশীয় আইনের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়, তবে বাংলাদেশে সেগুলোর কার্যকারিতা ও বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ থাকবে না এবং আরএসসি তার অর্পিত দায়িত্বের বাইরে কোনো কাজ করবে না।’

ফারুক হাসান বলেন, ‘যে কোনো প্রকার প্রভাবমুক্ত থেকে আমরা এই কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই যৌথ উদ্যোগে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও প্রত্যয় নিয়ে আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আমাদের অর্জনে গর্বিত এবং টেকসই ও নিরাপদ শিল্প নিশ্চিত করতে সকল সহযোগীদের নিয়ে যে যাত্রা শুরু করেছি, তা আমরা অব্যাহত রাখব।’

অ্যাকর্ড কখন গঠন হয়

২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন এবং ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। বিদেশি অনেক সংগঠন বাংলাদেশি পোশাক বর্জনের ডাক দেয়।

রানা প্লাজা ধসের পর গঠিত হয় ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড

সেই প্রেক্ষাপটে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি পায়। আর একই লক্ষ্যে গঠিত আমেরিকার ক্রেতাদের জোট পরিচিতি পায় অ্যালায়েন্স নামে।

পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল (আরসিসি) গঠন করে সরকার।

এরপর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার কাজ শুরু হয়। দেড় হাজারের বেশি কারখানার অবকাঠামো উন্নয়ন, আগুন থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে বাস্তবায়ন করা হয় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা, যেখানে প্রায় ৪০ লাখের মত কর্মী কাজ করে।

বাংলাদেশে আগের সেই অ্যাকর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ অগাস্ট। তার পরদিন থেকেই নতুন চুক্তি কার্যকর হবে।

এ বিভাগের আরো খবর