দিনাজপুরে স্ত্রী ও ছেলেকে সিআইডির ‘অপহরণের’ ঘটনায় আলোচনায় আসা সেই লুৎফরকে উদ্ধারের দাবি করে পুলিশ বলছে, তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উদ্ধারের পর আদালতের মাধ্যমে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ। রোববার দুপুরে স্বজনরা তাকে বুঝে পেয়েছেন।
ওসি মোস্তাফিজুর বলেন, ‘স্ত্রী ও পুত্রকে অপহরণের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে লুৎফর রহমান আত্মগোপনে ছিলেন। পরে চিরিরবন্দর থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আমাদের কাছে দিলে আদালতের মাধ্যমে তাকে পরিবারের কাছে হন্তান্তর করেছি।’
অপহরণের ঘটনায় মঙ্গলবার করা মামলায় রংপুর সিআইডির এএসপি সারোয়ার কবির, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসানুল হক ছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বহনকারী গাড়ির চালক মো. হাবিব ও মো. পলাশ নামের আরেকজনকে।
তাদের গত বুধবার দিনাজপুরের আমলি আদালত-৪-এ তোলা হলে সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামি পলাশ। এরপর উদ্ধার হওয়া মা-ছেলের জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়।
আদালতের একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানায়, পলাশ জবানবন্দিতে বলেছেন, চিরিরবন্দরের লুৎফর রহমান নামের এক ব্যক্তির কাছে তার কিছু টাকা পাওনা ছিল। সেটি আদায় করতে তিনি লুৎফরের বিরুদ্ধে রংপুর সিআইডিতে গিয়ে অভিযোগ করেন।
পলাশ বলেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে লুৎফরের চিরিরবন্দরের বাড়িতে অভিযান চালায় সিআইডির ওই তিন পুলিশ। সে সময় তিনিও তাদের সঙ্গে ছিলেন। লুৎফরকে না পেয়ে তার স্ত্রী জহুরা বেগম ও ছেলে মো. জাহাঙ্গীরকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
অপহরণের মামলার বাদী হলেন লুৎফরের ভাই খলিলুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যায় তার ভাই লুৎফর স্থানীয় বাজারে যান। সে সময় বাড়িতে ছিলেন লুৎফরের স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের বউ।
বাদীর অভিযোগ, সিআইডির এএসপি সারোয়ার কবিরের নেতৃত্বে একটি দল রাত সাড়ে ৯টায় ওই বাড়িতে যায়। তারা লুৎফরকে আটক করতে এসেছে বলে জানায়। লুৎফরকে না পেয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। ঘরে থাকা টাকা ও স্বর্ণালংকারও তারা লুট করে। এরপর লুৎফরের স্ত্রী জহুরা বেগম ও ছেলে মো. জাহাঙ্গীরকে মারধর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়।
লুৎফরের ভাগনে শামসুল আলম মানিক নিউজবাংলাকে জানান, ঘটনার পর থেকে লুৎফরকেও কোথাও পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে তাদের মোবাইল নম্বরে দফায় দফায় ফোন করে বলা হয়, জহুরা ও জাহাঙ্গীরকে মুক্তির বিনিময়ে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে।
বিষয়টি চিরিরবন্দর থানায় জানান মানিক ও খলিলুর। এরপর থানার পুলিশের সঙ্গে পরামর্শ করে মুক্তিপণের টাকা নিতে অপহরণকারীদের মঙ্গলবার বিকেলে দিনাজপুর সদর উপজেলার বাঁশেরহাটে আসতে বলা হয়।
অপহরণকারীরা মঙ্গলবার বাঁশেরহাট এলে চিরিরবন্দর থানার পুলিশ তাদের আটক করে। উদ্ধার করা হয় জহুরা ও তার ছেলে জাহাঙ্গীরকেও। তবে হদিস মিলছিল না লুৎফরের।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভয়ে আত্মগোপনে থাকা কোনো ব্যক্তিকে নির্ভয় দিয়ে উদ্ধার করা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেই হিসেবেই তাকে উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
মামলায় গ্রেপ্তার রংপুর সিআইডির এসএসআই ও কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসানুল হক।