গণফোরামের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বললেন, তিনি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করে দিয়ে ক্ষমতার দখল নেবেন। সেই আলোচনায় উপস্থিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী তুললেন দলে ঐক্যের প্রসঙ্গ। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মণ্টু ও তার অনুসারীদের অনুপস্থিত দেখে বললেন, তিনি দুঃখ পেয়েছেন।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরামের ২৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় এসব কথা বলেন জাফরুল্লাহ। আলোচনার মধ্যমণি ছিলেন কামাল হোসেন।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আজকে এই মিটিংয়ে এসে আমি যেমন আনন্দিত, তেমনি দুঃখিতও বটে। কারণ, আজকে আমি এখানে মণ্টুকে দেখছি না, সুব্রতকে দেখছি না, অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে দেখছি না। ড. কামাল হোসেন অনেক বড় মাপের নেতা। উনার সবাইকে ক্ষমা করে দিয়ে তাদের সামনে এসে বসাতে হবে।’
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে ড. কামাল হোসেন গণফোরাম গঠন করেন। কিন্তু রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জোট করে অবশ্য আলোচনায় আসে তারা। তবে নির্বাচন শেষে বিএনপি আর এই জোটকে এগিয়ে নিতে না চাইলে আবার গুরুত্ব হারায় গণফোরাম।
এর মধ্যে গত বছর দলে জাতীয় সম্মেলন ইস্যুতে দলে ভাঙন ধরার উপক্রম হয়। মণ্টু ও তার অনুসারীরা আলাদা সম্মেলন ডাকেন। এমনকি ড. কামালকে বাদ দিয়ে নতুন দল করার ইঙ্গিতও দেন।
এই বিভেদ তৈরি হয় আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া ইস্যুতে। রেজা গত জাতীয় নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেন। তাকে দলের সাধারণ সম্পাদকও করেন ড. কামাল। কিন্তু রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ রেজাকে মানতে নারাজ ছিলেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক মণ্টু, আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আবু সাইয়িদরা।
এক পর্যায়ে ড. কামাল অবশ্য রেজাকে বাদ দিয়ে মণ্টুদেরকে কাছে টানেন। আর রেজা কিবরিয়া রাজনীতি থেকে দূরে আছেন।
ড. কামাল হোসেনের উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি আপনাকে অনুরোধ করব, আপনি সবার দোষ ভুলে যান, ভুল ভ্রান্তি ভুলে যান। আপনিই আমাদের একমাত্র জীবিত নেতা। সবাইকে ডেকে, আলোচনা নিয়ে করুন। তা না হলে আমাদের বৃহত্তর ঐক্য হবে না।’
‘জাতীয় সরকার করে ড. কামালকে প্রধানমন্ত্রী করুন’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্ব রাজনীতিতে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শও দেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বলেন, ‘অনেক দিন তো দখল করে রাখলেন, ক্ষমতায় থাকলেন। এখন আপনার সময় এসেছে, ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার, একটা জাতীয় সরকার করার।
‘ড. কামাল হোসেনকে তার প্রধান করেন। তার আপনার দল থেকে রেহেনাকে আনেন, মতিয়া চৌধুরী ও তোফায়েলকে আনেন। সব দল নিয়ে দুই বছরে জন্য কাজ করেন। আজকে যদি এটা না হয় সুষ্ঠু রাজনীতি না গড়ায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে দেশের ভাগ্য ভালো হবে না।’
তিনি বলেন, “আপনার (শেখ হাসিনা) কাজ হবে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে কাজ করার। তুরস্ক থেকে কাজ শুরু করেন। পাকিস্তানে যান, গিয়ে তাদেরকে বলেন, ‘তোমরা যে অন্যায় করেছিলে তার জন্য ক্ষমা চাও’। কারণ, আজকে আমাদের স্থান হওয়া দরকার চীনের পাশে, আমেরিকার পাশে, কিন্তু ভারতের পেছনে নয়। আপনি সেই দায়িত্বে যান। মানুষকে নিয়ে সেটা করেন।’
আর আওয়ামী লীগ করা যাবে না
নাগরিক ঐক্যের প্রধান সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও এ সময় বক্তব্য রাখেন। বলেন, ‘আমি তো আওয়ামী লীগ করতাম। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ছিলাম। কিন্তু আমার নিজের কাছেই মনে হয়েছে, যেই দল গণতন্ত্রের কারণে এত সংগ্রাম করল, এত মুক্তিযুদ্ধ, এত জীবন দান, এত মা-বোনের ইজ্জতের বিসর্জন। তার পরও যখন কেলেঙ্কারিতে পড়তে হয়, আর যাই হোক ওই দল করা তো যাবেই না। এমনকি ওই দলের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব আছে, এ কথা বলতে পর্যন্ত আমার লজ্জা লাগে।’
মান্না বলেন, ‘অনেকে আমার কাছে জানতে চায় কী কারণে এই দল করতাস। আমি বলি, ভাই এই দলটা তো অনেক ভালো ছিল। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত এই ময়লা অর্জনা পরিষ্কার না হচ্ছে ততক্ষণ বাংলাদেশ পরিষ্কার হবে না।’