শতাধিক গাড়ি ছিনতাইকারী একটি চক্রের কয়েকজন সদস্যকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)। বাহিনীটি বলছে, চালককে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো খাবার খাইয়ে মুহূর্তেই গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যেত তারা।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে গাড়ি ছিনতাইয়ের ওই চক্রের প্রধানসহ পাঁচজনকে আটক করে র্যাব-৪ এর একটি দল।
আটকৃতরা হলেন আজিম উদ্দিন, রফিক উল্লাহ, সেলিম, কামরুল হাসান ও ওমর ফারুক। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত তিনটি পিকআপ, একটি সিএনজি, একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, তিনটি ছুরি, একটি চাইনিজ কুড়াল ও ছয়টি মোবাইল জব্দ করা হয়।
এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বাহিনীটির লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব বলছে, চালককে চেতনানাশক খাইয়ে মুহূর্তেই যেকোনো গাড়ির লক ভেঙে কিংবা বিকল্প চাবি ব্যবহার করে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে চক্রটির সদস্যরা। বিকল করে দিতে পারে গাড়ি শনাক্তের জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইসও।
ছিনতাইয়ের পর গাড়ির মালিককে ফোন করে অর্থ আদায় কিংবা গাড়ি বিক্রি করে দেয় চক্রটি।
র্যাবের মুখপাত্র আল মঈন বলেন, গত ১১ আগস্ট রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে গাড়ি ছিনতাই চক্রের পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে এই চক্রের প্রধান আজিমসহ আরও পাঁচজনকে আটক করা হয়। এই চক্রে ১৫-২০ জন জড়িত। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইতোমধ্যে শতাধিক গাড়ি ছিনতাই করেছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, চক্রটি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটসহ নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরের আশপাশের এলাকায় পিকাপ, সিএনজি ছিনতাই করে আসছিল। চক্রের সদস্যরা প্রথমে ছদ্মবেশে গাড়ি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। আরেকটি গ্রুপ মাঠ পর্যায় হতে গাড়ি ছিনতাই করে। এই গ্রুপে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চালক ও মেকানিকরা থাকে। যাতে নির্বিঘ্নে ছিনতাই বা চুরিকৃত গাড়ি নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে পারে। পার্কিং অবস্থায় গাড়ির লক ভেঙে নিয়ে যাওয়াসহ ছদ্মবেশে চালককে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো খাবার খাইয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।
গাড়ি ছিনতাই চক্রের সদস্য সন্দেহে এই পাঁচজনকে আটক করেছে র্যাব। ছবি: নিউজবাংলা
আল মঈন বলেন, পরের ধাপে সেসব গাড়ি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে রাখে চক্রটি। এরপর গাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা নিয়ে গাড়ি ফেরত দেয়। আবার কখনও গাড়ির রঙ পরিবর্তন করে বিক্রি করে কিংবা গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে দেয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সিন্ডিকেটের সদস্যদের নামে রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা ও গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তারা বিভিন্ন মামলায় আটক হয়ে জেলে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে চক্রের সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে র্যাব।