চন্দ্রিমা উদ্যানের সমাধিস্থলে জিয়াউর রহমানের মরদেহ নেই-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাকে জাদুকর বলেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট্রি জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে গণসংহতি আন্দোলনের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন সরকারের কট্টর সমালোচক চীনপন্থি সাবেক এই বাম নেতা।
আগের দিন আওয়ামী লীগের এক আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরে গিয়ে যে মারামারি করল বিএনপি, তারা জানে না যে সেখানে জিয়ার কবর নাই, জিয়া নাই ওখানে, জিয়ার লাশ নাই? তারা তো ভালোই জানে। তাহলে এত নাটক করে কেন? খালেদা জিয়াও ভালোভাবে জানে।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ জাদুকর শেখ হাসিনা। কী অপূর্ব পরিকল্পনায় তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের রাতে সবকিছু উল্টে দিলেন। ঠিক একইভাবে এখন উনি বলতে শুরু করেছেন চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের শবদেহ নেই।’
১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তাকে সমাহিত করা হয় সেখানেই। পরে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিজেদের সংহত করলে দেহাবশেষ সেখান থেকে সরিয়ে এনে চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করার কথা জানানো হয়।
দেহাবশেষ কফিনে করে আনা হয়েছিল। আর কফিনের মুখ তখন খোলা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়া কি বলতে পারবে তারা তাদের (স্বামী ও) বাবার লাশ দেখেছে? গুলি খাওয়া লাশ তো দেখাই যায়। তারা কি দেখেছে কখনও বা কেউ কি কোনো ছবি দেখেছে কখনও? দেখেনি। কারণ ওখানে কোনো লাশ ছিল না। ওখানে একটা বাক্স আনা হয়েছিল। সেখানে ওই বাক্সের ফাঁক দিয়ে যারা দেখেছে, সেই এরশাদের মুখ থেকেই শোনা, কমব্যাট ড্রেস পড়া ছিল। জিয়াউর রহমান তখন প্রেসিডেন্ট। সে তখন কমব্যাট ড্রেস পড়ে না। এটা কি বিএনপির লোকরা জানে না?’
বিএনপির পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া এখনও আসেন। তবে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি হঠাৎ এসব তথ্য কেন আনছেন? এটা অনেকাংশেই মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ।
‘মানসিকভাবে আপনার উপর এতো চাপ আপনার বিশ্রাম এবং চিকিৎসা প্রয়োজন। অনুগ্রহ করে জিয়াউর রহমান এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে টানাটানি করিয়েন না। তাদেরকে শান্তিতে ঘুমাতে দেন।’
তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনা ইতিহাস ভুলে গেছেন। জিয়াউর রহমানের বডি যারা গ্রহণ করেছে তাদের অনেক এখনও বেঁচে আছেন। সর্বকালে বৃহৎ জনসমাগম হয়েছিল জিয়াউর রহমানের মরদেহ যখন মানিক মিয়া এভিনিউতে আনা হয়েছিল।’
বঙ্গবন্ধু হত্যায় ‘র’
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ জড়িত বলেও অভিযোগ করেন জাফরুল্লাহ। তার যুক্তি ‘ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তাকে গিয়ে বলেছিল, এটা হচ্ছে। তার মানে তারা সেটি জানত। তারা এটি সংগঠিত করেছে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই হত্যাযজ্ঞে পাকিস্তানিদের এখানে আসার কোনো সুযোগই ছিল না।
গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, “১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডন থেকে দিল্লি পৌঁছেন তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মুসলমান, তারপরে বাঙালি’, সেদিন ভারতীয়রা বুঝতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধু স্বাধীনচেতা। সেদিনই তারা স্থির করেছিল বঙ্গবন্ধুকে সরাতে হবে।’
‘আ. লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়নি’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘অনেকে বলে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছিল। কিন্তু যারা ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, তারা জানে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়নি।
‘সত্য হচ্ছে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা সেরকম ভাবে মানুষের সামনে আবির্ভূত হতে পেরেছেন। আর বাকি যারা সত্তরের নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন তাদের অর্ধেকের বেশি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখে যখন আমরা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কি না- সে প্রশ্ন শুনতে পাই তখন বোঝা যায়, আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘পায়ের তলায় তাদের মাটি নেই। গণঅভ্যুত্থানে কখন তাদের মসনদ তছনছ হয়ে যায়- সে ভয়ে কম্পমান। সেজন্যই আবোল তাবোল কথা বলা শুরু করেছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের সমন্বয়কারী মনির উদ্দীন পাপ্পুর সভাপতিত্বে সমাবেশে সংগঠনটির শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের হয়।