বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জের ধরে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী ও তার প্রেমিককে আটক করা হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তদন্তকারী সংস্থার ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।
তিনি জানান, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে বাধা দেয়ায় স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমিলি ও তার প্রেমিক রবিউল করিম পিন্টু মিলে স্বামী এলিম সরকারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনামতো কেমিলি রাতেই তার স্বামী এলিমকে দইয়ের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে খাওয়ান। পরদিন ২৮ মার্চ সকাল আনুমানিক ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে কেমিলির পরামর্শে পিন্টু তার এক বন্ধুকে নিয়ে বাসায় ঢোকেন। পরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকা এলিমকে চাকু দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর বাসার সিসি ক্যামেরা ও ডিভিআর নিয়ে পালিয়ে যান পিন্টু ও তার বন্ধু।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এলিমের বাবা ফজল হক সরকার আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। থানার পুলিশের পরে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ঢাকা জেলার একটি টিম।
তদন্ত ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ২৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে আশুলিয়ার জিরাবো জামগড়া এলাকা থেকে হত্যার পরিকল্পনাকারী ও নিহতের স্ত্রী কেমিলি এবং তার প্রেমিক পিন্টুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা জেলা পিবিআই।
পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ডিশ ব্যবসায়ী এলিম স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন আশুলিয়া থানার কাঠগড়া এলাকায়। প্রতিদিনের মতো গত ২৭ মার্চ রাত ১০টার দিকে খাওয়াদাওয়া শেষে এলিম তার স্ত্রী-সন্তানসহ ঘুমিয়ে পড়েন। পরের দিন ২৮ মার্চ সকাল ৮টার দিকে এলিমের স্ত্রী কেমিলি ঘুম থেকে উঠে জরুরি প্রয়োজনে তার শ্বশুর ফজল হক সরকারের বাড়িতে যান। বাড়ির অন্যদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষে ওই দিন সকাল ১০টার দিকে বাড়িতে ফিরে আসেন কেমিলি। বাসায় ঢুকেই ছুরির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত এলিমকে দেখতে পান তিনি।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলার পর পুলিশের পাশাপাশি পিবিআইও তদন্ত করছিল। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এসপি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, রবিউল করিম পিন্টু আশুলিয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে লাইনম্যান হিসেবে চাকরি করেন। সেই সুবাদে স্থানীয় ডিশ ব্যবসায়ী এলিমের বাসায় বিদ্যুতের মিটার লাগানোর কাজ করতে গিয়ে কেমিলির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পরবর্তী সময়ে বিষয়টি এলিম টের পেয়ে যান। তা পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও জানাজানি হয়ে যায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। পরকীয়া সম্পর্কে বাধা দেয়ার জেরে স্বামী এলিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন তার স্ত্রী কেমিলি ও তার প্রেমিক পিন্টু।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমেই আমরা কেমিলির পরকীয়া প্রেমিক পিন্টুকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করি। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেমিলিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২০১৯ সাল থেকে তাদের এই পরকীয়া প্রেম চলে আসছিল। ধরা খেয়ে যাওয়ার কারণেই স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন কেমিলি।
এসপি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, যেহেতু ভুক্তভোগী এলিম আশুলিয়ায় ডিশ ব্যবসা করতেন, তাই হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাটি ডিশ ব্যবসাকেন্দ্রিক ঝামেলায় ধাবিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি পারেননি কেমিলি।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় পিন্টুর এক বন্ধু পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তদন্তের স্বার্থে তার নাম এখনই বলা যাচ্ছে না।