আমদানি বাড়ার পরও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন এক লাফে ৪৮ বিলিয়ন (৪ হাজার ৮০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
মঙ্গলবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এই রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার হিসেবে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ-সহায়তা যোগ হওয়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন এই নতুন উচ্চতায় উঠেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রিজার্ভে রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে। এমনকি করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও স্ফীত হচ্ছে তা।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ৪৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
গত দেড় মাসের কিছু বেশি সময়ে তা বেড়ে আবার ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। সোমবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।
মঙ্গলবার আইএমএফের এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) নামে পরিচিত ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ যোগ হওয়ায় সেই তা এক লাফে ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারের নতুন উচ্চতায় উঠে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি আগস্ট মাসের ২৩ দিনে (১ থেকে ২৩ আগস্ট) প্রবাসীরা ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে এই মহামারির মধ্যে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ‘খুবই ভালা’খবর বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই এই সফলতা এসেছে। এ জন্য আমি আবারও প্রবাসী ভাই-বোনদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এ ছাড়া রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা এবং বিদেশি ঋণ-সহায়তা বৃদ্ধি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘১২ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬.১ বিলিয়ন হতে ৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এত অল্প সময়ে এত বেশি পরিমাণ রিজার্ভ। এটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক রেকর্ড।’
২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকও অতিক্রম করবে বলে আশা করছেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছে ১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি মাসের ২৩ দিনে এসেছে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। মার্চের শেষের দিকে তা আবার ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
২৮ এপ্রিল রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। তবে ৪ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
এক মাসেরও কম সময়ে ১ জুন তা ফের ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। জুন মাস শেষে সেই রিজার্ভ আরও বেড়ে ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল।
এর আগে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ১৫ ডিসেম্বর ৪২ মিলিয়ন এবং ২৮ অক্টোবর ৪১ বিলিয়ন অতিক্রম করে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
আকুর জুলাই-আগস্ট মাসের বিল পরিশোধ করতে হবে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের উপরেই অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
২০২০ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের কিছু বেশি সময়ে রিজার্ভ বেড়েছে ১৩বিলিয়ন ডলার।
মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে গত অর্থবছরে ৬৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের এই ১০ মাসে ৪৮ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।
এ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আমদানি ব্যয় বাড়ার পরও রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় উঠেছে।