নির্বাচনের কৌশল ঠিক করার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকের সদস্যদের হোটেলবন্দি করে রাখার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলকে ত্রিপুরা পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ত্রিপুরা যেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও আইএনটিটিইউসির সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার সকালে ত্রিপুরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।
ব্রাত্য বসু বলেন, ‘ত্রিপুরার অবস্থা মোটেই ভালো নয়। সেখানে আইপ্যাকের সদস্যদের গৃহবন্দি করা হয়েছে। সেখানে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত।’
এ ঘটনায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে জানিয়েছেন, ‘বিজেপি আসলে ভয় পেয়েছে।’
পশ্চিমবঙ্গে বিপুল আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের পর, এবার ত্রিপুরা জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ত্রিপুরায় তৃণমূলের সংগঠন মজবুত করতে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকের (ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি) সদস্যরা তৃণমূল স্তরে সমীক্ষার কাজে নামেন।
অভিযোগ, করোনার দোহাই দিয়ে, তাদেরকে রোববার থেকে হোটেল বন্দি করে রেখেছে ত্রিপুরার বিপ্লব দেবের বিজেপি সরকার।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার দিল্লিতে বলেন, ‘লোকসভা নির্বাচনের দেরি আছে, কিন্তু তার একটা প্ল্যান এখন থেকে করা দরকার। তার আগে উত্তর প্রদেশ ও ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। ত্রিপুরায় আইপ্যাকের সদস্যদের গৃহবন্দি করা হয়েছে। এটা করা উচিত নয়।’
ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও আইপ্যাকের সদস্যদের হোটেলবন্দি করে রাখার ঘটনার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা শুধু অরাজকতা নয়, জঙ্গলের শাসনকেও ছাপিয়ে গেছে। বিজেপির ভয় কোন জায়গায় গিয়েছে এটা তার উদাহরণ।’
ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের পুলিশের বক্তব্য, করোনা টেস্ট করানোর জন্য আইপ্যাকের ২৩ সদস্যকে হোটেলে আটকে রাখা হয়েছে। যদিও মঙ্গলবার রাতে ওই ২৩ সদস্যের করোনার ফল নেগেটিভ এসেছে।
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আইপ্যাক সংক্রান্ত বিষয়টি পুরোপুরি ত্রিপুরা সরকারের অধীন। তবে ত্রিপুরায় আগেও গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। জমি দেখে এসেছে, কিন্তু মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।’
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ জয়ের পর সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস ক্রমশ নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে হিন্দি ও ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ, বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ছাত্র, মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
তৃণমূল নেত্রী মমতাকে করা হয়েছে তৃণমূলের সংসদীয় দলের চেয়ারপারসন।
সংসদের ভিতরে বাইরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইতে তৃণমূল কংগ্রেসকে সামনের সারিতে তুলে আনার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরা এবং উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ধাক্কা দেয়াই এখন প্রধান লক্ষ্য।
সেই লক্ষ্যে তৃণমূলের হয়ে ত্রিপুরায় কাজ করছে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক। সেই কাজে বাধা দিতে তাদেরকে হোটেলবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ।
যা নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল পড়েছে। আর তৃণমূল এটাকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে চাইছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন।