পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী সহিংসতার দুষ্কৃতির তালিকায় তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর নাম দিয়ে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেয়া ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন বা এনএইচআরসির প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়।
গত মঙ্গলবার হাইকোর্টে মুখ বন্ধ খামে জমা দেয়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভোট পরবর্তী সহিংসতার প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে এলে দেখা যায়, সেখানে দুষ্কৃতিকারীদের তালিকায় মহিলাসহ একাধিক তৃণমূল নেতা, মন্ত্রীর নাম রয়েছে।
এদের মধ্যে রয়েছেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক শওকত আলি মোল্লা, সাবেক তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ, নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনি এজেন্ট শেখ সুফিয়ানসহ ১০০ জনের বেশি ওই তালিকায় নাম রয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘ভোট পরবর্তী নয়, কমিশন যেসব ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে, তার বেশির ভাগই ভোটের আগের। যখন রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিল কমিশন। মানবাধিকার কমিশনকে সামনে এনে, বাংলার নামে মিথ্যা রটনা হচ্ছে।’
দুষ্কৃতিকারীর তালিকার নাম থাকা তৃণমূলের সাবেক বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, ‘এই দল যেসব এলাকায় গিয়েছে, তা থেকেই তাদের রাজনৈতিক চরিত্র প্রমাণ হয়েছে। আমিও আক্রান্ত হয়েছিলাম, কিন্তু আমার বাড়িতে তারা আসেনি।’
নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই নামগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি বলে এইসব প্রতিহিংসা পরায়ণের অভিযোগ করা হচ্ছে। এর কোনো মূল্য নেই।’
তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেন, ‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গে হার মেনে নিতে পারেনি। তাই পরিকল্পিতভাবে ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের নাম করে কিছু বিজেপির দালালকে পাঠিয়ে এই ধরনের রিপোর্ট সংগ্রহ করেছে। আমরা এর নিন্দা করছি। দলের সঙ্গে কথা বলে আইনি পদক্ষেপ নেব।’
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘আমি খুব আশ্চর্য হয়ে গেছি। খুব দুঃখ পেয়েছি। খুবই লজ্জাকর। ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কোথা থেকে তথ্য পেয়েছে আমি জানি না। আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
‘আমি শুধু বলব, পশ্চিমবঙ্গে কোনো একটি থানা, ভারতবর্ষের কোনো একটি থানায় আমার নামে একটা অভিযোগ দেখাক। এ বিষয়ে যা বলার দল বলবে। যদি বলে, আইনি পদক্ষেপ করবে, তাই করা হবে। আমি শুধু বলব, হিউম্যান রাইটস কমিশন ফেব্রিকেটেড স্টেটমেন্টগুলো তৈরি করে হাইকোর্টে জমা দিয়েছে।’
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিল বিজেপি। হাইকোর্ট জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দায়িত্ব দেয়, সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখার।
সেই মতো রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে তদন্ত করে মঙ্গলবার সেই প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়ে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে কমিশন। এর আগে বিজেপি তরফেও রাজ্যে ভোট পরবর্তী সহিংসতায় সিবিআই তদন্তের দাবি করা হয়।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও রাজ্যে ভোট পরবর্তী সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছেন।
রাজ্যপালের এমন সরবকেও আসলে ভোটে হেরে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি বলে মনে করে তৃণমূল।
কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে ২২ জুলাই।