পশ্চিমবঙ্গকে ভেঙে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি করে তোপের মুখে পড়েছেন বিজেপির এক এমপি।
রাজ্যের আলিপুরদুয়ারের বিজেপি এমপি জন বার্লারের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কথাবার্তা বলার অভিযোগ তুলে রোববার সন্ধ্যায় কোচবিহারের দিনহাটা থানায় এফআইআর করেছেন কোচবিহার জেলা যুব তৃণমূলের সহসভাপতি জাকারিয়া হোসেন।
জাকারিয়া হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘বিজেপি সাংসদ আলিপুরদুয়ার থেকে জিতে যিনি সংবিধান রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সেই জন বার্লা মহাশয় একের পর এক উসকানিমূলক কথা বলে যাচ্ছেন।
‘সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমস্ত জায়গাতে তিনি এমন উসকানি ছড়াচ্ছেন। আজকে এই সব কারণে যদি পশ্চিমবঙ্গ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তার সম্পূর্ণ দায়ভার নিতে হবে বিজেপিকে।’
তিনি বলেন, ‘তার উসকানিমূলক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কথাবার্তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভালোভাবে নেবে না। তার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত ও আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সে জন্য আমি একজন আইনজীবী হিসেবে দিনহাটা থানায় জন বার্লার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছি।’
শনিবার আলিপুরদুয়ারের সাংসদ কোচবিহারের একটি হোটেলে বিজেপির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে জন বার্লা বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের কারণে এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের এলাকায় কাজ পাচ্ছেন না। তাদের ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে যেতে হচ্ছে।’
এ দিন বার্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের দাবি থেকে তিনি সরছেন না। এটা এখানকার মানুষের দাবি। এই নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। রাজ্য নেতাদের বোঝাব।’
এরপরই সুর চড়ায় বিরোধীরা। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু রায় সাংবাদিক বৈঠকে প্রসঙ্গটি টেনে বলেন, ‘যত ষড়যন্ত্র হোক না কেন, বাংলাকে ভাগ হতে দেব না সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এর আগেও বাংলা ভাগের চেষ্টা হয়েছে।’
শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি বাংলা ভাগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে সাংসদ এসব বলছেন, তিনি তো নতুন সাংসদ হয়েছেন। তাই পশ্চিমবাংলাকে ভালো করে চেনেন না; বাংলার মানুষ এর কিরকম বিরোধিতা করে দেখতে পাবেন। সাফ কথা, আমরা বাংলাকে ভাগ করতে দেব না।’
তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় রোববার টুইট করে বলেন, ‘বিজেপি নেতারা যেভাবে রাজ্যকে অশান্ত করে তোলার জন্য সুযোগ খুঁজছেন, তা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি। তারা বাংলার মানুষের রায়কে মেনে নিতে পারছেন না। আমাদের ভাগ করা অসম্ভব।’
জন বার্লার দাবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানায়নি বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘জন বার্লা তার ব্যক্তিগত মত জানিয়েছেন। রাজ্য ভাগের কোনো দাবি সমর্থন করে না বিজেপি।’
বাংলার রাজনীতিতে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য ঘোষণার দাবিকে কেন্দ্র করে যখন উত্তপ্ত, তখন রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব রাজ্যের রাজ্যপাল। তিনি এরইমধ্যে দিল্লিতে গিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে নালিশ করে এসেছেন।
রোববার রাজ্যপালের টুইটারে জানানো হয়েছে, সোমবার ধনকড় সাত দিনের সফরে উত্তরবঙ্গ যাচ্ছেন। ফলে, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের পরেও তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।