ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও আগামীতে ফের সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একাধিক রাজ্য লকডাউন শিথিল করতে শুরু করেলেও সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, তা নিয়ে সম্প্রতি চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ল্যানসেট’ থেকে ২১ জন বিশেষজ্ঞকে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তারা আটটি নীতি দ্রুত অনুসরণের আহ্বান জানান তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায়।
ফের করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার বিষয়ে বিখ্যাত চিকিৎসক দেবী শেঠী থেকে শুরু করে বায়োকনের মতো আন্তর্জাতিক বায়োফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা কিরণ মজুমদার শ’রাও পরামর্শ দিয়েছেন। তারা জানান, আগামী দিনে করোনার ভয়াবহ প্রকোপ থেকে বাঁচতে গেলে দ্রুত কড়া পদক্ষেপের প্রয়োজন।
২১ জন বিশেষজ্ঞ যে আটটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন, সেগুলো হলো-
১. জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোকে দ্রুত কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। জেলাভিত্তিক যেহেতু করোনা সংক্রমণের সংখ্যাও ভিন্ন হয়, সে কারণে সবার জন্য এক নিয়ম মেনে চলা কঠিন। এর বদলে যদি পরিস্থিতি অনুযায়ী করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ নেয়া যায়, তবে দ্রুত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
২. যাবতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্থাৎ, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ও হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট খরচ বেঁধে দেয়া উচিত। বিভিন্ন রাজ্যে সাধারণ মানুষদের জন্য যে স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তার মধ্যেই যাতে খরচ সীমাবদ্ধ থাকে।
৩. সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সুস্পষ্ট ও তথ্যভিত্তিক নির্দেশিকা প্রকাশ করা উচিত। বাড়িতে রোগীর চিকিৎসা ও দেখভাল, জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা ইত্যাদি সম্পর্কে আঞ্চলিক ভাষায় স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকলে সাধারণ মানুষের বুঝতে এবং সে মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে।
৪. করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কাজে লাগানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত সুরক্ষা অর্থাৎ মাস্ক, পিপিই কিট, ফেস শিল্ডের ব্যবস্থা এবং করোনা চিকিৎসাসংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুসরণ।
৫. রাজ্য সরকারগুলোর উচিত হাতে থাকা টিকার ওপর নির্ভর করে কোন বয়সসীমার মানুষকে আগে দেয়া হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। ভ্যাকসিনের সরবরাহ বাড়লে সে অনুযায়ী টিকাকরণের সংখ্যা বাড়ানো।
৬. করোনা মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুম্বাইয়ের করোনা মোকাবিলার উদাহরণ দিয়ে তারা জানান, কীভাবে রাজ্য তথা দেশবাসী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে দ্রুত করোনা মোকাবিলা সম্ভব তার ব্যবস্থা করা।
৭. করোনা-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে সরকারের নথিতে স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন। বয়স, লিঙ্গ ভিত্তিতে সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা, মৃত্যুহার, অঞ্চলভিত্তিক টিকাকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য মজুত রাখা।
৮. করোনা সংক্রমণের কারণে যাদের জীবনযাপন ও পেশায় প্রভাব পড়েছে, তাদের দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। যারা মহামারিতে কাজ হারিয়েছেন, তাদের আর্থিক সাহায্য বা কাজে পুনর্বহাল ও ক্ষতির মুখে পড়া সংস্থাগুলোকে কেন্দ্রের তরফে অর্থনীতির হাল ফেরার পর আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়া উচিত।