গত বছর দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর থেকে করোনা নিয়ে একের পর এক উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে জনগণকে টিকা নিতে নিরুৎসাহিত করা, মাস্ক পরতে নিষেধ করা ধর্মীয় বক্তারাও এখন টিকা নিতে শুরু করেছেন।
এবার টিকা নিলেন কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, যিনি এর আগে একাধিকবার বলেছেন, মাদ্রাসায় করোনা আসবে না।
রোববার বেলা ১টার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার ভ্যাকসিন নেন তিনি।
গাড়িতে করে টিকাকেন্দ্রে যাওয়া সত্তরোর্ধ্ব বাবুনগরী টিকা নেন গাড়িতে বসেই।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মো. ইমতিয়াজ হোসাইন, বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী মাওলানা শফি।
টিকা নেয়ার পর হেফাজত নেতা বলেন, ‘টিকাকে হারাম বা নাজায়েজ বলা যাবে না… শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়েজ বলা যাবে না। চিকিৎসা জায়েজ। চিকিৎসাবিধি মেনে চলতে হবে। করোনার টিকা নিয়েছি। কোনো সমস্যা হয়নি।’
গত ১৪ জুলাই বাবুনগরী টিকার জন্য নিবন্ধন করেন বলে জানিয়েছেন হাটহাজারীর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা । তাকে দেয়া হয়েছে চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা।
আগে যা বলেছেন
গত ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক ব্রিফিংয়ে বাবুনগরী বলেন, যেখানে কোরআন, হাদিস পাঠ করা হয়, যেখানে হেফজখানায় ছাত্ররা কোরআন পাঠ করে, সেখানে করোনা আসবে না। তার কারণ হলো আল্লাহর রহমত।
- আরও পড়ুন: আজহারীর আস্থা এখন টিকায়
গত ৩০ জুলাই এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে সবার প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, সকল প্রকার অন্যায়, জুলুম ও পাপাচার থেকে বিরত হয়ে ভবিষ্যতে আর কখনো এসব না করার সংকল্প নিয়ে তওবা করে আল্লাহমুখী হয়ে যাওয়া।
‘ভবিষ্যৎ জীবনে আল্লাহ ও রাসুলের পরিপূর্ণ আনুগত্য, ইবাদত-বন্দেগি, বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায়, রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহর পূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ, সৎকর্ম ও সাধ্যমতো মাখলুকের সেবা করা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দৃঢ় সংকল্প করা।’
করোনা থেকে দূরে থাকতে হলে কী করতে হবে, তার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বেশি বেশি তওবা, ইসতিগফার, নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে থাকতে হবে। একমাত্র আল্লাহর দয়া, রহমত ও ইচ্ছা ছাড়া মহামারির এই দুর্যোগ কেউ রোধ করতে পারবে না।’
কেবল বাবুনগরী নন, উদ্ভট বক্তব্য দিয়েছেন আলোচিত প্রায় সবাই
করোনাকে ‘আল্লাহর সৈনিক’, তাদের বিশ্বে পাঠানো হয়েছে অমুসলিম ও ‘ইসলামবিদ্বেষীদের শায়েস্তা করতে’, ঠিকমতো নামাজ-রোজা করলে মুসলমানদের করোনা হবে না, এ ধরনের বক্তব্য ক্রমাগত দিয়ে এসেছেন তারা।
করোনাকে আল্লাহর সৈনিক আখ্যা দিয়ে দেশে হাস্যরসের জন্ম দেন নানা উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা মুফতি কাজী ইব্রাহীম।
ওই বছরের মার্চে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের একটি মাহফিলে যোগ দিয়ে একই কথা বলেন আহজারীও। তিনি সে সময় করোনা থেকে বাঁচতে একটি নির্দিষ্ট দোয়া করতে নিজের ফেসবুকে পরামর্শ দেন।
তবে এক বছর পর সেই মালয়েশিয়া যখন করোনায় জর্জরিত, হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না, অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশে টিকা নেয়ার বিষয়ে স্ট্যাটাস দেন আজহারী।
জামায়াতপন্থি ধর্মীয় বক্তা তারেক মনোয়ার একাধিক ওয়াজে মাস্ক না পরার কথা বলেছেন বারবার। বলেছেন, একটি দোয়া করে ঘর থেকে বের হলেই করোনা হবে না কারও।
সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া আমির হামযা দেন আরও আপত্তিকর বক্তব্য। পাঁচ ওয়াক্ত ঠিকমতো নামাজ পড়লে, রোজা রাখলে কারও করোনা হবে না, এ বিষয়ে একটি চ্যালেঞ্জও দেন। তিনি এমনও দাবি করেন, কোরআনে আল্লাহ এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কোরআনকে মিথ্যা প্রমাণ করবেন না।