গত ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর রাস্তায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে পুলিশের হয়রানির মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে জন্য এবার সতর্ক দুই পেশার শীর্ষ কর্তারা।
লকডাউন শুরুর আগের দিন রোববার চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ এবং সব জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
এতে গত এপ্রিলে লকডাউন চলাকালে যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল, সেগুলো যেন আর না ঘটে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঠপর্যায়ের কর্মীদের আগেভাগে নির্দেশনা দেয়ার অনুরোধ করা হয়।
- আরও পড়ুন: জরিমানার পর ডাক্তার দম্পতিকে জেলে নেয়ার হুমকি পুলিশের
- আরও পড়ুন: চিকিৎসকের সঙ্গে বিতণ্ডা: ম্যাজিস্ট্রেট মামুন বদলি
- আরও পড়ুন: ডা. জেনিকে ‘পাপিয়া’ বলা ওসির শাস্তি দাবি
এতে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় শুধু প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনা-নেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
চিকিৎসক বা অন্য জরুরি পেশার লোকজন কীভাবে চলাচল করবে, সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপনে কিছু জানানো হয়নি।
বৃহস্পতিবার আরও কঠোর ব্যবস্থা আসছে, সেটি সরকারের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, একে বলা হচ্ছে কঠোর লকডাউন, যা এবার পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন নামে।
সরকার এবার জনগণকে ঘরে রাখার বিষয়টিতে যে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, তা বোঝা যায় সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তে। কঠোর লকডাউন তথা শাটডাউন নিশ্চিতে অন্যান্য নানা বাহিনীর সঙ্গে নামবে সেনাবাহিনীও।
তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, চিকিৎসকদের ঘরে থাকার সুযোগ নেই। তাদের কর্মস্থলে যেতে হবে রোগীদের চিকিৎসার স্বার্থেই।
- আরও পড়ুন: লকডাউনে এবার ডাক্তার-পুলিশ বিতর্কে তোলপাড়
- আরও পড়ুন: জেনির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থার দাবি পুলিশ কর্মকর্তাদের
- আরও পড়ুন: হয়রানি চললে সেবা ব্যাহত হবে, সরকারকে চিঠি
অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত এপ্রিলে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছিল, সে ধরনের কিছু যেন না হয়, তাই মাঠপর্যায়ের কর্মীদের আগেই দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গত ৫ এপ্রিল লকডাউন দিয়ে মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে জরুরি প্রয়োজনে যারা বাইরে যাবেন, তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয় মুভমেন্ট পাসের। তবে গণমাধ্যমকর্মী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার লোকদের এই পাসের আওতার বাইরে রাখার কথা জানানো হয়।
তবে বেশ কয়েকটি এলাকায় চিকিৎসক পরিচয় পাওয়ার পরেও জরিমানা করার ঘটনায় তৈরি হয় ক্ষোভ। একটি ক্ষেত্রে চিকিৎসককে কর্মস্থলে দিয়ে আসার পথে জরিমানা করা হয় তার গাড়ির চালককে। সে সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সেই চিকিৎসক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বললে তাকে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে।
- আরও পড়ুন: মেডিক্যালে ‘চান্স পাওয়া’ অনেকেই পুলিশে
- আরও পড়ুন: ‘যারা রাজাকার বলে, পালি হাড় ভাইঙা দিতাম’
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসকের সঙ্গে ঢাকার নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বাদানুবাদ, এতে এক ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি দুই পেশার মানুষদের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করায়।
নিউমার্কেট থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিকিৎসকদের নানা সংগঠন সোচ্চার হয়ে ওঠে। অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সেই চিকিৎককে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ওঠে।
পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেয়।
এর মধ্যে সোমবার থেকে নতুন করে লকডাউন দিয়ে সারা দেশে রিকশা ছাড়া সব ধরনের যাত্রীবাহী যান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থা চালু থাকবে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত।
নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই- এমন চিকিৎসকদের কর্মস্থলে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) আইন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সাকিল সরোয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের পরিবহনের বিষয়টির বরাবরই উপেক্ষিত হয়ে আসছে। যার ফলে ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি চিকিৎসক-প্রশাসন ও পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান। তাই যেকোনো ধরনের অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য নিরবচ্ছিন্ন এবং পরিষ্কার দিকনির্দেশনাসংবলিত আদেশ জারি করতে পুলিশ কাছে ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি চিঠি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে আমাদের চিকিৎসকদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি যে যে প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে, তাদের সেই প্রতিষ্ঠান পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে।’
‘এবার আর ভুল-বোঝাবুঝি নয়’
লকডাউনে মুভমেন্ট পাস লাগবে, এই বিষয়টি এখন পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। তবে যদি লাগেও, তাহলেও চিকিৎসকদের এই পাস নিতে হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চিকিৎসকরা বরাবরই জরুরি সেবার আওতাভুক্ত ছিলেন। করোনা মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবা নিশ্চিতে করেছেন। বিগত সময়ে কিছু ভুল-বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছিল। তবে আশা করি, এবার সেটা হবে না। মাঠপর্যায়ে আমাদের যেসব সদস্যা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের ইতিমধ্যে সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’