ধর্ষণের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর করা আরও একটি মামলা থেকে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
এ নিয়ে এই ঘটনায় দুটি মামলায় নূরকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।
এই মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে মোট পাঁচজনকে। তবে প্রধান আসামি নূরের সাবেক সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ঢাবির ওই ছাত্রী তার প্রতিক্রিয়ায় নিউজবাংলাকে বলেন, 'আমি শুনেছি এটা। অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি। কিন্তু আমি এখনও আশা রেখে আছি। ভরসা করে আছি আইনের ওপর। কিন্তু একটা ফাঁক-ফোকর তো থাকেই সবসময়। সেটাই হয়ত কাজে লাগাইতেছে। আমার ধারণা নেই। তবে আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।'
'ঘটনা ঘটানো আর ঘটনা ধামাচাপা দেয়া দুইটায় গুরত্বপূর্ণ। কিন্তু আইন এইক্ষেত্রে কী বলে আমি জানি না৷'
অব্যাহতি পাওয়ার পর নুরুল হক নুর নিউজবাংলাকে বলেন, 'আমরা আগেও বলেছি এই মামলা, অভিযোগ এগুলো পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে। সেটার প্রমাণ এখন সবাই দেখতেছে। আমাকে দমিয়ে দেয়ার জন্য এটাও একরকম ষড়যন্ত্র।'
বৃহস্পতিবার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আসলাম উদ্দিন (নিরস্ত্র) এই মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন।
নূর ছাড়া অন্য যে চারজনকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ, সাইফুল ইসলাম, সভাপতি নাজমুল হুদা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহিল বাকি।
একটি মামলায় নূরের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তারের পর নূরের দুই সহযোগীকে গত অক্টোবরে আদালতে তোলা হয়
গত ২০, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর, তার সংগঠনের সাবেক আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, কেন্দ্রীয় নেতা নাজমুল হাসান সোহাগসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী।
প্রথম মামলায় অভিযোগ করা হয় মামুন তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন। নূরকে জানানো হলে তিনি প্রথমে মীমাংসার আশ্বাস দেন। পরে চুপ হয়ে যেতে বলে হুমকি দেন। বলেন, কথা না শুনলে অনলাইনে ‘পতিতা’ বলে প্রচার চালাবেন।
নূরের অনুসারীরা শুরু থেকেই মামলাটিকে হয়রানিমূলক দাবি করে আসছিলেন
দ্বিতীয় মামলায় বলা হয়, মামুনের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে বাদীকে চাঁদপুর নিয়ে যান সোহাগ। ফেরার পথে তিনিও ধর্ষণ করেন।
তৃতীয় মামলায় আনা হয় সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ।
নূরসহ সব আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে অক্টোবরে আমরণ অনশনেও বসেন। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহে তার মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর থেকে আর তিনি গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেননি।
- আরও পড়ুন: ‘ছবি-ভিডিও নেই’, তাই ‘ধর্ষণ হয়নি’
নূর অবশ্য শুরু থেকেই এই ঘটনাটিকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করে আসছিলেন। বলেছিলেন, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন বলে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে সে সময় অনলাইনে এসে সেই তরুণীকে ‘চরিত্রহীনা’ বলে গালি দিয়েও সমালোচিত হন নূর। পরে অবশ্য সেই বক্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমাও চান।
- আরও পড়ুন: নূরের ‘রুচিহীন’ বক্তব্যে সমালোচনার ঝড়
গত ১৪ জুলাই আরও একটি মামলায় নূর, সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা এবং আব্দুল্লাহিল বাকিকে অব্যাহতি এবং নাজমুল হাসান ও হাসান আল মামুনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান।