নারায়ণগঞ্জে বিপাকে পড়া ব্যবসায়ী খাদ্য সহায়তা চেয়ে ফোন করার পর তাকে ১০০ জনকে ত্রাণ বিতরণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাধ্য করার ঘটনায় গঠন করা তদন্ত কমিটিকে আরও সাত দিন সময় দেয়া হয়েছে।
নির্ধারিত তিন দিনে প্রতিবেদন দিতে না পারার পর বুধবার তারা সময় বাড়ানোর আবেদন করে। বৃহস্পতিবার সে আবেদন গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
গত শনিবার তোলপাড়ের পরদিন কমিটি গঠন করে বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী নিউজবাংলাকে জানান, ‘ঘটনার তদন্ত চলমান রয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে না পাড়ায় আরও সাত দিনের আবেদন করা হয় জেলা প্রশাসকের কাছে। আজ বিকেলে সেই আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। কমিটির সদস্য তদন্ত শেষ করে আগামী ৬ জুন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।’
তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য সহকারী কমিশনার কামরুল হাসান মারুফ বলেন, ‘কমিটির কাজ হলো ঘটনার মূল কারণ ও কার গাফলতি হয়েছে তা খুঁজে বের করা।’
ফরিদ আহমেদের স্ত্রীর অলঙ্কার বন্ধক রেখে সুদের টাকায় কেনা ত্রাণ বিতরণ করেন ইউএনও আরিফা জহুরা
তবে সেই ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ জানিয়েছেন, তার সঙ্গে তদন্ত কমিটির কেউ কথা বলেনি। তার বাসায় যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ খাদ্য সহায়তা চেয়ে গত বৃহস্পতিবার ৩৩৩ নম্বরে কল করেন।
খাবার নিয়ে আসেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ও অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম। তারা দেখেন ফরিদ থাকেন চারতলা ভবনে। জানতে পারেন তার গেঞ্জি কারখানা আছে।
ফোন দিলে ইউএনও আরিফা জহুরা আসেন ঘটনাস্থলে। দেন শাস্তির ঘোষণা।
জানান, সরকার প্রতি প্যাকেটে যে পরিমাণ খাবার দেয় দুস্থদের, সেই পরিমাণ খাবারসহ ১০০ প্যাকেট করে বিতরণ করতে হবে।
নির্দেশমতো শনিবার বিকেলে ফরিদ আহমেদ সেই খাবার বিতরণও করেন। আর সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনও স্বয়ং।
ইউএনও আরিফা জহুরা দুইবার ঘটনাস্থলে গিয়েও ফরিদ আহমেদের করুণ কাহিনি জানতে পারেননি
সেদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে নিউজবাংলা ফরিদ আহমেদের জীবনের করুণ কাহিনি জানতে পারে। যে বাড়িতে তিনি থাকেন, সেটি তাদের ছয় ভাইবোনের। তার নিজের হিস্যা কমই। তার গেঞ্জি কারখানা থাকলেও গত বছর করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর থেকে সেটি বন্ধ।
পরে সংসার চালাতে সেই ব্যক্তি কাজ নিয়েছেন আরেক কারখানায়, কিন্তু চোখের সমস্যায় সেই কাজও করতে পারেন না। সংসারের আয় নেই।
ইউএনওর ফরিদ-কাণ্ডে তোলপাড়ের পরদিন সরকারি কর্মকর্তারা এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করে সব কথা শুনে আসেন
এর মধ্যেও ইউএনওর আদেশ পেয়ে ফরিদ কারাভোগের ভয়ে স্ত্রী-কন্যার স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করেন। কেনেন খাদ্য।
ওই রাতেই নিউজবাংলা সংবাদ প্রকাশ করে ত্রাণ সত্যিই দরকার ছিল ফরিদের, ভুল ইউএনওর শিরোনামে। হয় তোলপাড়।
পরদিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা ফরিদ আহমেদের বাসায় গিয়ে সব কাহিনি শুনতে পারেন।
ইউএনওর ফরিদ-কাণ্ডে তোলপাড়ের পরদিন সরকারি কর্মকর্তারা এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করে সব কথা শুনে আসেন।
জেলা প্রশাসক সেদিনই জানান, ফরিদ আহমেদের খরচ করা টাকা ফেরত দেয়া হবে। পরে সে টাকা দেয়া হয়েছে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে, যদিও সেটি সরকারি তহবিলের টাকা ছিল। ইউএনও আরিফা জহুরার ভুলের দায় মেটানো হয় জনগণের করের টাকায়।
ফরিদ আহমেদের হাতে টাকা তুলে দেন দেওভোগ নাগবাড়ি পঞ্চায়েত কমিটির উপদেষ্টা সাহিনুর আলম
একই দিন ঘটনাটি তদন্তে গঠন করা হয় কমিটি। জেলা প্রশাসক বলেন, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
কমিটির প্রধান করা হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারীকে। অন্য দুই সদস্য হলেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও সহকারী কমিশনার কামরুল হাসান মারুফ।