বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘অনেক ধন্যবাদ নিউজবাংলাকে’

  •    
  • ২৫ মে, ২০২১ ১৭:০৯

ফরিদ নিউজবাংলার প্রতিবেদককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘অনেক ধন্যবাদ নিউজবাংলাকে। আপনারা অনেক ভালো থাকবেন। আর ঝামেলা বাড়াতে চাই না। সবার ঋণ পরিশোধ হয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জের সেই ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ তার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের সংবাদ প্রকাশ করায় নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

খাদ্য সহায়তা চেয়ে উল্টো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশে ত্রাণ দিতে বাধ্য হওয়া ফরিদ নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশের কারণেই টাকা ফেরত পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে নিউজবাংলার প্রতিবেদককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘অনেক ধন্যবাদ নিউজবাংলাকে। আপনারা অনেক ভালো থাকবেন। আর ঝামেলা বাড়াতে চাই না। সবার ঋণ পরিশোধ হয়েছে।’

সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকার ফরিদ আহমেদ গত বৃহস্পতিবার ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান।

ফোন পেয়ে ত্রাণ নিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম দেখেন, ফরিদ আহমেদ চার তলা ভবনে থাকেন। তার একটি গেঞ্জি কারখানা আছে। তারা বিষয়টি ইউএনওকে জানান।

বাড়ি, কারখানা থাকার পরেও সহায়তা চাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা জানান, জরিমানা হিসেবে ফরিদকে ১০০ মানুষকে ত্রাণ দিতে হবে।

কারাভোগের ভয়ে সুদের টাকায় জোগাড় করা ত্রাণ

শনিবার ত্রাণ বিতরণের আয়োজনে গিয়ে নিউজবাংলা জানতে পারে ফরিদ আহমেদের আসল কাহিনি। তিনি যে বাড়িটিতে থাকেন, তার পুরোটার মালিকানা তার নয়। তার যে গেঞ্জি কারখানা আছে, সেটি ২০২০ সালে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর বন্ধ হয়ে গেছে।

স্ত্রীর অলঙ্কার বন্ধক রেখে জরিমানার ১০০ লোকের ত্রাণের টাকা যোগাড় করেছেন ফরিদ।

এরপর নিউজবাংলায় ত্রাণ সত্যিই দরকার ছিল ফরিদের, ভুল ইউএনওর শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। শুরু হয় সমালোচনা।

রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, টাকা ফেরত দেয়া হবে ফরিদ আহমেদকে।

এরপর স্থানীয় পঞ্চায়েত নেতা সাহিনুর আলমের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয়।

টাকা পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি ফরিদ।

ফরিদের সঙ্গে কেন হলো এমন

এ বিষয়ে কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব মো. বাহাউদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা থেকে স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিগুলোতে সহায়তা দেয়া হয়। এ বিষয়ে আমরা জানি না। স্থানীয় মেম্বার বলতে পারবেন।’

ফরিদ আহমেদের স্ত্রীর অলঙ্কার বন্ধক রেখে সুদের টাকায় কেনা ত্রাণ বিতরণ করেন ইউএনও আরিফা জহুরা

৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (সংরক্ষিত) মরিয়ম আক্তার নিউজবাংলাকে জানান, নিয়ম অনুযায়ী মেম্বার যাচাই বাছাই করেছেন। কিন্ত তিনি ছিলেন না, মুন্সিগঞ্জে বেড়াতে গিয়েছিলেন।

মেম্বার আইয়ুব আলী শনিবার দাবি করেছিলেন, চার তলা বাড়িটি ফরিদ আহমেদের পৈত্রিক। তিনি পোশাক কারখানার ব্যবসায়ী। হয়তো করোনা মহারির কারণে ব্যবসা খারাপ হয়ে যেতে পারে কিন্তু তিনি সাবলম্বী। ৩৩৩ তে ফোন করে খাবার পাওয়ার যোগ্য তিনি না।

তবে মূল ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে আর পাওয়া যায়নি। বাড়িতে গিয়েও দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়, কেউ খোলেনি।

পঞ্চায়ের কমিটির নেতার দাবি, টাকা দিয়েছেন তিনি

যিনি টাকা দিয়েছেন তার পুরো নাম সাহিনুর আলম। তিনি দেওভোগ নাগবাড়ি পঞ্চায়েত কমিটির উপদেষ্টা।

সাহিনুর আলম বলেন, ‘ফরিদ আহমেদের বাড়িটি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। তারা সব ভাইবোন মিলে থাকে। তিনি দুই বার স্ট্রোক করছেন। এই এলাকায় একটি হোসিয়ারি দোকানে কাটিং মাস্টার। ইউএনও সাহেব যখন আসছে তখন উনি উনার তথ্যটা সঠিক ভাবে বলতে পারে নাই। পরে উনারে ১০০ প্যাকেট ত্রাণ দিতে বলা হয়। কিন্তু উনি অসহায়। তাই টাকার ব্যবস্থা করতে স্বর্ণ বন্ধক রাখছে। এ হইলো অবস্থা।’

আপনার হাত দিয়ে কেন টাকা দেয়া হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমারে প্রশাসন থেকে ফোন করছে। বলছে বলেন এটার এখন যা হওয়ার হয়ে গেছে গা, আপনি একটা ব্যবস্থা করেন। তাই আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ফরিদ আহমেদ ও তার স্ত্রীর হাতে ৬০ হাজার টাকা দিছি।’

প্রশাসন থেকে টাকা দিতে বলা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, প্রশাসন থেকে বলে নাই। আমি আমার ব্যক্তিগত টাকা দিছি।’

ডিসি বললেন সরকারি তহবিলের টাকা

তবে সাহিনুরের বক্তব্যের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কথার মিল নেই।

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (আরিফা জহুরা) আমাকে জানিয়েছেন ফরিদ আহমেদকে টাকা দেয়া হয়েছে।’

এই টাকা কে দিয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উনি (ইউএনও) আমাকে জানিয়ে অফিস ফান্ড থেকে টাকা দেয়া হয়েছে। বিস্তারিত ইউএনও বলতে পারবেন।’

তবে দিনভর ফোন ধরছেন না ইউএনও।

এ ঘটনায় রোববার দুপুরে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

এ বিভাগের আরো খবর