বাংলাদেশিদের দেয়া অনুদানের অর্থ সরাসরি গাজায় যাবে না বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত। এ অর্থে কেনা চিকিৎসা সরঞ্জাম যাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায়। কীভাবে এই সহায়তা পৌঁছাবে, সেটিও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক বার্তায় অনুদান চেয়ে একটি বার্তা দেয়া হয়। সেটি দূতাবাসের ফেসবুক পেজেও দেয়া হয়। বার্তায় ফিলিস্তিনের গাজায় সাহায্যের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম বা অর্থ দেয়ার কথা বলা হয়।
বৃহস্পতিবার দূতাবাসে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ ওষুধ ও অর্থ নিয়ে দূতাবাসে ভিড় করেছেন। তারা সাধ্যমতো ফিলিস্তিনিদের জন্য সাহায্য করছেন। দূতাবাসের তিন জন কর্মকর্তা ব্যস্ত ছিলেন অনুদান নিতে। এ ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল আর্থিক সেবা বিকাশ, নগদ ও রকেটে অর্থ পাঠানো হচ্ছে।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই অনুদান কীভাবে পাঠানো হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গাজা ও পশ্চিম তীরের মধ্যে টানাপোড়েনের কারণে অনুদান ঠিকভাবে পৌঁছাবে কিনা সেটি নিয়েও অনেকে কথা বলছেন।
ফিলিস্তিনের দুটি অংশ পশ্চিম তীর ও গাজার উপত্যকা আলাদা কর্তৃপক্ষের অধীনে শাসিত হয়। তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন আছে। বর্তমান প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) চেয়ারম্যান মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিন সরকার পশ্চিম তীর কেন্দ্রিক। আর গাজা (গাজা স্ট্রিপ) ফিলিস্তিনের অংশ হলেও ২০০৭ সাল থেকে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্টের (হামাস) নিয়ন্ত্রণাধীন। সেক্ষেত্রে ঢাকা থেকে অনুদান পাঠানোয় কোনো সমস্যা হবে কিনা অনেকের মনে সে প্রশ্ন দেখা দেয়।
বিষয়টি জানতে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে কথা বলা হয় ঢাকায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদানের সঙ্গে।
রামাদান নিউজবাংলাকে বলেন, ঢাকা থেকে সংগৃহিত অর্থ সরাসরি পাঠানো হবে না।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসে অনুদানের ঢেউ
তিনি বলেন, ‘গাজায় আমাদের হাসপাতালগুলোর জন্য যে চিকিৎসা সরঞ্জাম দরকার, সেটি কেনার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। অনুদানে পাওয়া সকল অর্থ সেই কমিটির মাধ্যমে ব্যবহার করা হবে। আমরা গাজা থেকে একটি তালিকা পেয়েছি। এটি গাজার হাসপাতালগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা, যা গাজার সকল মানুষের উপকারে লাগবে। আমি এ সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যে একটি সংবাদ সম্মেলন করব।’
কীভাবে গাজায় চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেয়া হবে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত রামাদান বলেন, ‘গাজার হাসপাতালগুলো ডা. ফাওয়াজ আবু জায়েদার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে। তারা আমার কাছে সেই তালিকাটি পাঠিয়েছে।
‘ওই কমিটি চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী তিনটি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করবে, যারা ক্রয় প্রস্তাব দিবে। আমরা ঢাকা থেকে সরাসরি অর্থ পাঠিয়ে দেব নিয়োগপ্রাপ্ত এরকম একটি কোম্পানির কাছে। সেই কোম্পানি সরঞ্জাম সরবরাহ করবে গাজায়। (গাজার) কমিটি আমাদেরকে এ সংক্রান্ত নথি ও ছবি পাঠিয়ে দেবে।’
তবে অনুদানের অর্থ গাজায় চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য অপ্রতুল হবে বলে অনুমান করে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সকল চাহিদা পূরণ করতে পারব না, কেননা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের খরচ পড়বে প্রায় ৮০ লাখ ডলার। কাজেই আমরা তাদের শুধু অনুদানে পাওয়া অর্থেরই যোগান দেব। অনুগ্রহ করে নিশ্চিত জানুন, আমরা গাজায় ফিলিস্তিনি ব্যক্তিদের জন্য এটা করছি।’
অর্থ অনুদান নিয়ে প্রশ্ন
তবে অনেকেই টাকা তোলার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সরাসরি টাকা দিলে সেটির হিসেব কীভাবে রাখা হবে, সেটিও জানতে চেয়েছেন।
দূতাবাসের অনুদান চেয়ে বার্তায় সরাসরি অর্থ প্রদান, মোবাইল আর্থিক সেবা ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটা চিঠি এসেছে। বিদেশি কর্মাশিয়াল ব্যাংক অফ সিলনে একটা অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য দূতাবাস অনুমতি চেয়েছে। আপাতত এই টাকা ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকে (ইউসিবিএল) জমা হচ্ছে। ফরেন কারেন্সিতে টাকা পাঠানোর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নিতে হবে। এখন হিসাব খোলার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ফাইনালি দেশের বাইরে অর্থ পাঠানোর আগে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিবে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের
এ বিষয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত জানান, অনুদান সংগ্রহ শেষ হলে তারা সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন।
তিনি বলেন, ‘সরাসরি কোনো অর্থ কারো হাতে তুলে দেয়া হবে না। আমরা শুধুমাত্র চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাবো। কারণ টাকা সরাসরি পাঠালে কেউ পাবে আবার কেউ পাবে না। এটা একটি ঝামেলার সৃষ্টি করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক নিউজবাংলাকে বলেন, এভাবে টাকা ওঠানো হলে সেখানে স্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ, মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে কেউ টাকা দিতে পারছে। কিন্তু সেই অর্থ কি পুরোটা অনুদানে ব্যবহার করা হবে? বিকাশ, নগদ, রকেটের মাধমে কে কত টাকা পাঠাবে তার সঠিক হিসাব পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ছাড়া অন্যভাবে টাকা নিলে সেখানে ধোঁয়াশা থেকেই যায়। দেশের মানুষ আবেগের জায়গা থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিচ্ছে। এ জন্য কত অংকের টাকা পাওয়া যাচ্ছে তার সঠিক হিসাব রাখা জরুরি।