ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের সহায়তার আবেদনে সাড়া দেয়ায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় অবস্থিত ফিলিস্তিন দূতাবাসে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা জানান।
এদিন বাংলাদেশ মিডিয়া প্রফেশনালস কমিউনিটি নামের একটি সংগঠনের সমন্বয়ক কৃষিবিদ সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলকের নেতৃত্বে নয়টি টিভি চ্যানেল, আটটি পত্রিকা ও ১২টি অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিকসহ ৩০ জনের একটি প্রতিনিধি দল এই বৈঠকে অংশগ্রহণ নেন।
রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান এ সময় সাংবাদিকদের সামনে ফিলিস্তিনের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের স্বতস্ফুর্তভাবে সমর্থন ও পাশে থাকায় আমরা কৃতজ্ঞ।’
ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসে অনুদানের ঢেউ
ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান জানান, এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে, তবে ফিলিস্তিনের হাসপাতালের জন্য মেডিক্যাল সরঞ্জাম প্রয়োজন। নগদ সহায়তা দিয়ে মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট কেনা হবে। বাকি টাকা দিয়ে ৪০ হাজার গৃহহীনকে গৃহ নির্মাণে সহায়তা করা হবে।
ইসরাইলি বাধা পেরিয়ে এই সহায়তা ফিলিস্তিনে পৌঁছাতে তিন চার মাস সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে রোববার এক ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করে ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাস। আর্থিক সহায়তা পাঠাতে যোগাযোগের জন্য কয়েকটি নাম্বারও দেয়া হয়।
এই কয়েক দিনে কেমন সাড়া পেয়েছেন জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এখনও আমরা সেটি হিসাব করিনি। তবে বাংলাদেশের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় আমরা কৃতজ্ঞ।’
ফিলিস্তিনে পশ্চিম তীর ও গাজায় আলাদা সরকার থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের মানুষ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। আমরা একসঙ্গে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে আছি। বাংলাদেশের মানুষের এই অর্থ সহায়তা পশ্চিম তীর ও গাজা দুই জায়গাতেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতার জন্য ব্যবহার করা হবে।’
ফিলিস্তিনিদের সাম্প্রতিক সংকটের সূচনা পবিত্র ভূমি খ্যাত অবরুদ্ধ পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা উত্তেজনার জেরে শুরু হয় সহিংসতা।
আল-আকসা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে ইসরায়েলে রকেট ছোড়ে হামাস। পাল্টা জবাবে ১০ মে থেকে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
২০১৪ সালের পর অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলায় এ পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি হারিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এর মধ্যে ৪৭ হাজার মানুষের ঠাঁই হয়েছে সংস্থাটি পরিচালিত বিভিন্ন স্কুলে।
ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রহীন ফিলিস্তিনি শরণার্থীর সংখ্যা ৫৯ লাখের বেশি।
অবরোধে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ২০ লাখ বাসিন্দার গাজা উপত্যকা নতুন করে সহিংসতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনে অঞ্চলটিতে বোমা মেরে অর্ধশত স্কুল-হাসপাতালসহ ১০০-এর কাছাকাছি ভবন আংশিক বা পুরোপুরি ধসিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বিমান। জ্বালানি সংকটে অঞ্চলটির মৌলিক সেবাও বন্ধের পথে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৭ জনে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ জন নারী ও ৬৪ জন শিশু। অন্যদিকে হামাসের রকেট হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই শিশুসহ ১২ ইসরায়েলি।