বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হেফাজতের তাণ্ডব: প্রশাসন-পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ সামনে আনলেন এমপি

  •    
  • ২৯ মার্চ, ২০২১ ২১:৩২

‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডবের সময় কারা হামলা করল, কেন হামলা করল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা প্রশাসন কেন নিষ্ক্রিয় থেকে নীরব ভূমিকা পালন করল, কেন সদর থানা থেকে এমন মাইকিং করা হলো তার একটা ব্যাখা প্রয়োজন। আমরা সমগ্র বিষয়টি উপরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকেও দুষলেন সদর আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তার অভিযোগ, প্রশাসন ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে মাদ্রাসার ছাত্ররা ত্রাস ছড়াতে পেরেছে।

গত শুক্র ও রোববার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় তৈরি বিভিন্ন স্থাপনায় বেপরোয় হামলা করে মাদ্রাসার ছাত্র ও তাদের সমর্থকরা।

এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা মোকতাদির চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডবের সময় কারা হামলা করল, কেন হামলা করল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জেলা প্রশাসন কেন নিষ্ক্রিয় থেকে নীরব ভূমিকা পালন করল, কেন সদর থানা থেকে এমন মাইকিং করা হলো তার একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আমরা সমগ্র বিষয়টি উপরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বারবার তাগাদা সত্ত্বেও প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি।

‘যারা দাঁড়াননি, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই’- বলেন ক্ষমতাসীন দলের এমপি।

রোববার হরতালে শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় মাদ্রাসাছাত্রদের হামলা ছিল ব্যাপক। তারা পেট্রল নিয়ে এসে আগুন ধরিয়ে দেয়

২০১৬ সালে জেলার নাসিরনগরে হিন্দু গ্রামে হামলার কথাও তুলে ধরেন এমপি মোকতাদির। বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নাসিরনগর ঘটনার কোনো বিচারের সম্মুখীন করা হয় নাই। এই জন্যই আজকের এই গোষ্ঠীটি এই ধরনের কাজ করে থাকে।’

গত শুক্রবার মাদ্রাসাছাত্ররা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, মৎস্য অধিদপ্তর, আনসার ক্যাম্প ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলায় পুলিশ গুলি চালালে নিহত হয় একজন।

রোববারের হরতালে হামলা ছিল আরও ব্যাপক। সেদিন সকালে যখন মাদ্রাসার ছাত্ররা মিছিল নিয়ে আসে, তখন সদর থানা থেকে মাইকিং করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহিম বলেন, ‘আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করুন, আমরা আপনাদেরকে কোনো বাধা দেব না।’

এমপি মোকতাদির বলেন, ‘২৬ মার্চ দুপুর ৩টার পর থেকে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের দ্বারা পুরো শহরে তাণ্ডবলীলা চলেছে। রেলস্টেশনটি ভাঙচুর করে তছনছ করা হয়েছে। যারা ভাঙচুর করেছে তাদের অধিকাংশ কম বয়সী। তাদেরকে ইসলাম কায়েমের প্রলোভন দেখিয়ে কেউ না কেউ এই কাজটি করিয়েছে।

শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয় মাদ্রাসাছাত্ররা। হামলা করে আরও নানা স্থাপনায়

‘তারপর তারা বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে এসে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালসহ অনেকগুলো ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। তারা পর্যায়ক্রমে ডিসি ও এসপি’র বাংলো, এসপি অফিস, সিভিল সার্জন অফিস, মৎস্য অফিসসহ বেশ কিছু কার্যালয় ধ্বংস করে দিয়েছে।’

অফিসগুলোর সামনে থাকা ফুলের বাগানগুলোও ধ্বংস করে দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দানব ছাড়া কেউ ফুলের বাগান ধ্বংস করতে পারে না।’

২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারিও শহরে মাদ্রাসাছাত্ররা একই ধরনের হামলা চালিয়েছিল। সেই হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে হামলা হয়েছিল তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত আমি চেয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। এটি যদি সঠিক বিভাগীয় তদন্ত হতো তাহলে তার প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসত। আজকের এই জঘন্য ঘটনা ঘটত না।’

গত রোববারের মতো সেদিনও হেফাজতের কর্মীরা শহরের মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যাালয়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, সুর সম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন।

শুক্র ও রোববার হামলার ক্ষত এখনও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর জুড়ে রয়ে গেছে

হরতালের দিন সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের বাসা ও কার্যালয়, মেয়র নায়ার কবিরের বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাসভবনে আক্রমণ হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, সহসভাপতি তাজ মোহাম্মদ ইয়াসিন, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল বারি চৌধুরী মন্টুও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশের কী ভূমিকা ছিল

গত শুক্রবার শহরের কান্দিপাড়া এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার ছাত্রের মিছিল বের হয়। তারা শহরের কেন্দ্রস্থল বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে হামলে পড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে। সেটি ভেঙে আগুন দেয়ার পাশাপাশি তারা আগুন দেয় শহরের রেল স্টেশন, আনসার ক্যাম্প, মৎস্য অধিদপ্তরে। হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও।

শুক্রবার যখন এসপি কার্যালয়ে হামলা হয় তখন পুলিশ গুলি করে। শনিবার হেফাজত কর্মীরা সুহিলপুরের নন্দনপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে পুলিশের ওপর হামলা চালালে গুলি ছুড়ে পুলিশ। আর রোববারের হরতালে তারা গুলি চালায় পুলিশ লাইনস এলাকায়।

এর বাইরের কোনো ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। বরং রোববার হরতালে পুলিশের নীরব ভূমিকা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভও আছে।

রোববার হেফাজতের হরতালে মাদ্রাসাছাত্ররা শহরে মুক্তিযুদ্ধের যত স্মৃতিচিহ্ন আছে, হামলা করে সবগুলোতে। বাদ ছিল না বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরালও

শুক্রবারের তাণ্ডবের পর রাতে পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় আধা সামরিক বাহিনী বিজিবি। শনিবার শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেলেও রোববারের ত্রাস চলাকালে তাদের তৎপরতাও চোখে পড়েনি।

সোমবার শহর পরিদর্শনে এসে এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহপরিদর্শক-ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।

তবে তিনি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ স্বীকার করতে চাননি। ডিআইজি বলেন, ‘ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময় পুলিশ নীরব ছিল না। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে পুলিশ। যতটুকু পেরেছে পুলিশ করেছে। বাইরে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। তবু এ ব্যাপারে অতিরিক্ত ডিআইজিকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর