বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তাণ্ডবের পর হেফাজতের দাবি মামলা প্রত্যাহার

  •    
  • ২৯ মার্চ, ২০২১ ২০:০৬

‘আমাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তাদের নামে দেয়া মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে আমরা শুরু হতে যাওয়া দাওরায়ে হাদিসের (কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ যাকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দেয়া হয়েছে) পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যাব।’      

হরতাল ও তার দুই দিন আগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডবের ঘটনায় কোনো ধরনের মামলা না করার দাবি জানিয়েছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। বলেছে, মামলা হলে তারা আরও ‘কঠোর আন্দোলন’ করবে।

রোববার সহিংস হরতালের পর দিন সোমবার বিক্ষোভ ও দোয়া দিবসের কর্মসূচি দেয় কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটি।

বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কেন্দ্রীয়ভাবে পালিত হয় কর্মসূচি। সেখানে বক্তব্য রাখেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী। তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।

হেফাজত নেতা বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তাদের নামে দেয়া মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে আমরা শুরু হতে যাওয়া দাওরায়ে হাদিসের (কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ যাকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দেয়া হয়েছে) পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যাব।’

ইউসুফী বলেন, ‘আমাদের কাছে পরীক্ষা বড় নয়। ঈমান রক্ষা করাই আমাদের বড় দায়িত্ব।’

সোমবার বায়তুল মোকাররম মসজিদে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের দোয়া দিবস পালন

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে দুই সপ্তাহ ধরেই সক্রিয় ছিল হেফাজত।

সফরের চার দিন আগে তারা সংবাদ সম্মেলন করে অঙ্গীকার করে রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না। তবে এই ঘোষণা দেয়া হেফাজত নেতা মামুনুল হক ২৫ মার্চ বলেন, মোদি দেশে এলে সরকার পতনের ক্ষেত্র তৈরি করবেন তারা।

সফরের দিন বায়তুল মোকাররম এলাকায় সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীরা। সাড়ে চার ঘণ্টার সংঘর্ষ চলাকালে সেদিন মাদ্রাসা থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে তাণ্ডব চালানো হয় চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরজুড়ে।

হাটহাজারীতে ডাকবাংলো, এসি ল্যান্ড অফিস ভাঙচুরের পর হামলা হয় থানায়। তখন পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হলে নিহত হয় চারজন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, মৎস্য অধিদপ্তর, আনসার ক্যাম্প ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলায় পুলিশ গুলি চালালে নিহত হয় একজন।

এর প্রতিক্রিয়ায় রোববারের হরতালে হেফাজত কর্মীরা ছিল আরও সহিংস।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান ও হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে ত্রাস তৈরি করে।

বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তার নজির সাম্প্রতিক ইতিহাসে নেই। সেখানে জেলা পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, সুর সম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ছাড়াও তাণ্ডব চালানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির সবগুলো স্থাপনায়।

শুক্র ও রোববার হেফাজত সমর্থকরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা করে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে

হামলা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল ভাঙচুরের পাশাপাশি দেয়া হয়েছে আগুন, ভাঙচুর চালানো হয়েছে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলকে, হামলা হয়েছে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার কার্যালয়ে, শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরেও ধরানো হয়েছে আগুন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত অংশে ভাঙচুর চালানো হয়েছে ৫০টির বেশি গাড়িতে, আগুন দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটিতে, ছাড় দেয়া হয়নি এমনকি অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়ি, গণমাধ্যমকর্মীদের দেখলেই এসেছে তেড়ে, এমনকি এক গণমাধ্যমকর্মীর নাম সৌরভ শুনে তাকে কালমা বলতে বাধ্য করা হয়েছে।

সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পেটানো হয়েছে দল বেঁধে, মসজিদে মাইকিং করে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে আজমিরীগঞ্জে, কিশোরগঞ্জে কোনো উসকানি ছাড়াই ভাঙচুর করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়।

রোববারের হরতালে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্ন ভাঙচুর করে আগুন দেয়া হয়

এসব ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে, আর কয়েকটি ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। বায়তুল মোকাররমে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে। আজমিরীগঞ্জে হামলার ঘটনায় আসামি ৪০০ জন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০ জায়গায় হামলার প্রতিটিতে মামলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনা তদন্তে একজক অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।

পেট্রল ঢেলে আগুনের প্রতিটি ঘটনা তদন্তে ডাকা হয়েছে অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি আর বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআইকে।

‘দোয়া দিবসে’ ঢাকা মহানগর হেফাজত আয়োজিত সমাবেশে আবদুর রব ইউসুফী পাল্টা অভিযোগ এনে বলেন, তাদের নেতা-কর্মীদের ওপরই হামলা হয়েছে। গাড়ি পোড়ানোতে তারা নয়, সরকার সমর্থকরা দায়ী- এমন দাবিও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তাদের নিজস্ব বাহিনী দিয়ে দমন-পীড়ন করেছে। এই হেলমেট বাহিনী বায়তুল মোকাররমে হামলা করেছে। এই বাহিনী গতকালের হরতালে গাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়েছে।’

হেফাজতের সহিংসতার শুরু গত ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকে

তবে তাণ্ডবের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহতদের নিজেদের কর্মী দাবি করে তাদের চিকিৎসার দাবিও করেন ইউসুফী। বলেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদরেকে মুক্ত করা সরকারের দায়িত্ব।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূরুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক দিনে যারা আহত হয়েছে তাদের সরকার থেকে চিকিৎসার জন্য কোনো সহযোগিতা করা হয়েছে বলে শুনিনি। এ জন্য আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের আইনি সহায়তার মাধ্যমে মুক্ত করা হবে। এই কাজে আর্থিক সহযোগিতা করতে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করেন তিনি।

মামুনুল হকের বড় ভাই হেফাজত নেতা মাহফুজুল হক, জুনাইদ আল হাবীব, আতাউল্লাহ আমিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর